কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি ।।
কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদুল ফিতরের দিন পুলিশের ওপর হামলাকারী জঙ্গি শফিউল ইসলাম ওরফে শরিফুল ইসলামকে আশ্রয় দেয়ার অভিযোগে গাইবান্ধা থেকে আটক আনোয়ার হোসেনকে (৪৮) ৫ দিনের রিমান্ড দিয়েছে আদালত। বুধবার ২৪ আগস্ট দুপুরে কিশোরগঞ্জ সদর থানা পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করলে কিশোরগঞ্জের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আ: ছালাম খান ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত ২৩ জুলাই শুক্রবার রাতে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ পৌরশহরের পান্থপাড়া এলাকায় নিজের বাড়ির সামনে থেকে তাকে ৫৪ ধারায় আটক করে র্যাব ১৩-এর একটি দল। পরে গাইবান্ধার গবিন্দগঞ্জ থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করা হয়। কিশোরগঞ্জ পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে বুধবার তাকে শ্যোন এ্যারেস্ট করা হয়।
শোলাকিয়ায় হামলার পর ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটক (পরে বন্দুক যুদ্ধে নিহত) জঙ্গি শফিকুলের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাকে আটক করা হয় বলে পুলিশ জানায়।
আনোয়ার হোসেন গোবিন্দগঞ্জের পান্থপাড়ার মৃত হাকিম উদ্দিনের ছেলে। তিনি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার খলসী ইবতেদায়ি মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক। পুলিশ জানায়, আনোয়ার হোসেনের বাড়িতে গত ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ভাড়া থাকে শোলাকিয়া হামলায় জড়িত জঙ্গি শফিউল। ওই বাসায় অবস্থান করার সময় শফিউল শোলাকিয়া হামলা, গোবিন্দগঞ্জে ব্যবসায়ী অরুণ দত্ত হত্যা, জুতা ব্যবসায়ী দেবেশ চন্দ্র হত্যা ও পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে গৌড়ীয় মঠের অধ্যক্ষ যজ্ঞেশ্বর রায় হত্যায় অংশ নেয়।
শোলাকিয়ায় হামলার পর পুলিশ তাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটক করে। বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার আগে র্যাব হেফাজতে ময়মনসিংহে চিকিৎসাবস্থায় আইনশৃংখলা বাহিনীর কাছে শফিউল এসব হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা জানায়। তবে আটক মাদ্রাসা শিক্ষক আনোয়ারের স্ত্রী তুহিন বেগম জানান, তিন-চার বছরের এক শিশুসন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে শফিউল তাদের আধাপাকা বাড়ির দুটি রুম ভাড়া নেয়। তবে তারা ঘর থেকে তেমন একটা বের হতো না। এমনকি তাদের সঙ্গেও খুব একটা যোগাযোগ ছিল না। গোপনে তারা কোনো জঙ্গি কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিল কি-না, তা তিনি এবং তার স্বামী জানেন না বলে তুহিন বেগম দাবি করেন।
এদিকে আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে শোলাকিয়া মাঠ ও এর আশেপাশে তিন প্লাটুন বিজিবি ও ডগ স্কোয়াডসহ র্যাব ও পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে বলে শোলাকিয়া ঈদগা পরিচালনা পরিষদ ও সাধারণ পরিষদের এক জরুরি সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। ঈদুল ফিতরের দিন যে রাস্তা দিয়ে ঢুকে জঙ্গিরা হামলা চালিয়েছিল, সেই রাস্তাটি এবার সীল করে দেয়া হবে। ঈদের অন্তত ১৫ দিন আগে ঈদগার আশপাশের এলাকার কোন বাসায় নতুন ভাড়াটিয়া বা বহিরাগত কোন অতিথি না রাখার জন্যও এলাকাবাসীকে আহবান জানানো হয়। এছাড়াও কোন মুসল্লি ঈদগায় ছাতা, ব্যাগ এবং মোটা জায়নামাজ নিয়ে ঢুকতে পারবেন না।
ঈদগা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাসের সভাপতিত্বে সোমবার ২২ আগস্ট বিকালে জেলা কালেক্টরেট সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। জামাত শুরু হবে সকাল ৯টায়। এতে ফরিদ উদ্দিন মাসউদ ইমামতি করবেন বলে জানা গেছে।
সভায় পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন খান, জেলা পরিষদের প্রশাসক অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান, পৌর মেয়র মাহমুদ পারভেজ, পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট শাহ আজিজুল হক, ঈদগা কমিটির সম্পাদক ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাসলিমা আহমেদ পলি, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার মো. আসাদ উল্লাহ, সদর থানার ওসি মীর মোশারফ হোসেন, জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি মোস্তফা কামাল, অ্যাডভোকেট মো. মফিজউদ্দিন, জেলা চেম্বারের পরিচালক শেখ ফরিদ আহমেদ, ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম আশফাক, মোস্তফা খান পাঠান প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
উল্লেখ্য, গত ঈদুল ফিতরের দিন ১০ টায় ঈদজামাত অনুষ্ঠানের নির্ধারিত সময়ের প্রায় সোয়া ঘণ্টা আগে পুলিশের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটক করা হয় শফিউল ওরফে শরিফুলকে। পরে শফিউল ময়মনসিংহের নান্দাইলে র্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে গত ৪ আগস্ট নিহত হয়।