বৈচিত্রময় আর মনমাতানো রুনা লায়লা

তার সুরের আবীর শ্রোতার মনে বইয়ে দেয় প্রশান্তির হাওয়া। বৈচিত্রময় আর মনমাতানো গানে গানে কয়েক দশক ধরে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই কণ্ঠশিল্পী বিলিয়ে এসেছেন নানান রঙের অনুভূতি। তার সুরসমুদ্রে ভেসে যেতে ইচ্ছে করে সববয়সী শ্রোতারই। তিনি রুনা লায়লা। ১৭ নভেম্বর ছিল তার জন্মদিন। তার জন্য রইলো জন্মদিনের শুভেচ্ছা।

আগামী বছরের জুনে সংগীতজীবনের ৫০ বছর পূর্ণ করতে চলেছেন রুনা লায়লা। লোকজ, পপ, রক, গজল, আধুনিক- সব ধাঁচের গানই গেয়েছেন তিনি। বাংলা, হিন্দি, উর্দু, ইংরেজিসহ ১৮টি ভাষায় গান গেয়েছেন তিনি। এ পর্যন্ত গানের সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি। তার জীবনের কম জানা কিছু ঘটনা জেনে নিন।

* ১৯৫২ সালের ১৭ নভেম্বর সিলেটে রুনা লায়লার জন্ম। তার বাবা বাবা মোহাম্মদ ইমদাদ আলীর বাড়ি রাজশাহীতে। মা আমিনা লায়লা। বোন দীনা লায়লা ও ভাই সৈয়দ আলী মুরাদ। দীনা লায়লা গান শেখার সময় শৈশবে রুনা বোনের পাশে বসে থাকতেন। একটি অনুষ্ঠানে দীনা অসুস্হ থাকার কারণে আয়োজকরা রুনাকে মঞ্চে বেসিয়ে দেন। সেখানে তানপুরা নিয়ে ‘খেয়াল’ পরিবেশন করে নজর কাড়েন তিনি।

* ডানহাতে সোনার বালা, বাঁ-হাতে ঘড়ি, আঙুলে কয়েকটি আংটি- রুনা লায়লাকে বরাবরই এমন সাজগোজে দেখা যায়।

* মাত্র সাড়ে ১২ বছর বয়সে ১৯৬৪ সালে পাকিস্তানি ছবি ‘জুগনু’র মাধ্যমে গানে অভিষেক হয় রুনা লায়লার। ওই ছবির ‘গুড়িয়াসি মুন্নি মেরি’ তার জীবনের প্রথম গাওয়া গান।

* বাংলাদেশের ছবিতে রুনা লায়লার গাওয়া প্রথম গান হলো গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লেখা ও সুবল দাসের সুরে ‘গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে’। লাহোরে থাকাকালেই গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছিলেন তিনি। ১৯৭৪ সালে দেশে স্থায়ীভাবে চলে আসার পর প্রথম তিনি গেয়েছেন সত্য সাহার সুরে ‘জীবন সাথী’ ছবিতে। তার সহশিল্পী ছিলেন খন্দকার ফারুক আহমেদ।

* বলিউডের বেশ কয়েকটি ছবিতে গান গেয়েছেন রুনা লায়লা। সর্বশেষ গেয়েছিলেন ১৯৯০ সালে অমিতাভ বচ্চন অভিনীত ‘অগ্নিপথ’ ছবির ‘আলীবাবা মিল গ্যায়া চলি্লশ চোর সে’ গানটি। বলিউডে তার গাওয়া সবচেয়ে জনপ্রিয় গান ‘ও মেরা বাবু চেইল চেবিলা’। এর সংগীত পরিচালনা করেন এম. আশরাফ। পাকিস্তানের ‘মান কি জিত’ (১৯৭২) ছবির এ গানটি ব্যবহার হয় বলিউডের ‘ঘর দুয়ার’ (১৯৮৫) ছবিতে।

* রুনা লায়লা সংগীতজীবনের শুরু থেকে স্বতন্ত্র ঢঙ তৈরি করেছেন। গানে আসার আগে বেশিরভাগ গায়িকা একইভাবে দাঁড়িয়ে গাইতেন। তার গানের পরিবেশনা দেখে এই চিত্রটা পাল্টায়। অনেকেই তার পরিবেশনাকে অনুসরণ করেছেন।

* নব্বইয়ের দশকে মুম্বাইয়ে পাকিস্তানি সুরকার নিসার বাজমির সুরে একদিনে ১০টি করে তিন দিনে ৩০টি গানে কন্ঠ দিয়ে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লেখান রুন লায়লা।

* শর্মিলী আহমেদ, শাবানা, ববিতা থেকে শুরু করে মৌসুমী, পপি, শাবনূর, পূর্ণিমা এবং এই প্রজন্মের নায়িকাদের জন্যও গেয়েছেন রুনা লায়লা। তাদের মধ্যে নিজের গাওয়া গান শাবানা ও ববিতার ঠোঁটেই বেশি পছন্দ তার।

* গানের বাইরে চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘শিল্পী’ ছবিতে নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেছেন রুনা লায়লা। এতে তার সহশিল্পী ছিলেন আলমগীর। পরবর্তী সময়ে তাকেই বিয়ে করেন রুনা।

* কেউ অনুরোধ করলে ‘যখন আমি থাকবো না’ গানটি গেয়ে থাকেন রুনা। নিজের গাওয়া প্রিয় গান ‘যখন আমি থাকবো নাকো’। তবে ‘দমাদম মাস্ত কালান্দার’ গানটির অনুরোধ বেশি আসে তার কাছে।

* জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন পাঁচবার। ছবিগুলো হলো- ‘দি রেইন’ (১৯৭৬), ‘যাদুর বাঁশী’ (১৯৭৭), ‘অ্যাকসিডেন্ট’ (১৯৮৯), ‘অন্তরে অন্তরে’ (১৯৯৪) এবং ‘তুমি আসবে বলে’ (২০১২)। এ ছাড়া স্বাধীনতা পদক (১৯৭৭), বাচসাস পুরস্কার, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতি পুরস্কার, পাকিস্তানের নিগার অ্যাওয়ার্ডসহ অনেক পুরস্কার পেয়েছেন।

 

রুনা লায়লার জনপ্রিয় একডজন গান

১. গানেরই খাতায় স্বরলিপি

২. শিল্পী আমি তোমাদের গান

৩. যখন আমি থাকবো না

৪. যখন থামবে কোলাহল

৫. এই বৃষ্টিভেজা রাতে

৬. আমার মন বলে তুমি আসবে

৭. পাখি খাঁচা ভেঙে উড়ে গেলে

৮. বন্ধু তিনদিন তোর বাড়িত

৯. সুখ তুমি কী বড় জানতে ইচ্ছে করে

১০. আয়রে মেঘ আয়রে

১১. প্রতিদিন তোমায় দেখি

১২. পান খাইয়া ঠোঁট লাল

 

রুনা লায়লার গানের কিছু ভিডিও লিংক :

http://www.youtube.com/watch?v=n5F5kS-Wn_M

http://www.youtube.com/watch?feature=player_embedded&v=Y3cH7QkkQXQ

http://www.youtube.com/watch?feature=player_embedded&v=80y_QKgi5ew

http://www.youtube.com/watch?feature=player_embedded&v=hckG1D8Eblw

http://www.youtube.com/watch?feature=player_embedded&v=Lkhj6yKa_Q4

 

সৌজন্য : বাংলানিউজ ডটকম

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!