ছোটোবেলায় একটি মেন্যু খুব পছন্দ ছিল তার। পাউরুটির সাথে গোশতের মিশ্রণে তৈরি বার্গার। সপ্তাহে বেশ কয়েকবার মেসির জন্যই এটি তৈরি হতো বাড়িতে। অন্যথায় তাকে খাওয়ানো হয়ে পড়ত দুঃসাধ্য ব্যাপার। তবে আরো একটি মেন্যু পছন্দ ছিল মেসির। এটি অবিষ্কার করেন তার যুব কোচদের একজন কার্লোস মারকনি। চকোলেট কুকিজের ভক্ত ছিলেন আর্জেন্টিনার বর্তমান অধিনায়ক। এটি জানার পর মারকনি একটি শর্ততে আবদ্ধ হন মেসির সাথে। একটি গোল, একটি চকোলেট কুকিজ! কিন্তু সমস্যা হয়ে দাঁড়াল প্রতি ম্যাচেই মেসির চার-পাঁচটি গোল। মারকনির খরচের মাত্রা ক্রমেই বাড়তে থাকল। তখন এই কোচ নতুন শর্তজুড়ে দেন। মেসিকে গোল করতে হবে হেডের সাহায্যে। পরের ম্যাচে প্রতিপক্ষের সব ফুটবলারকে পেছনে ফেলে বল গোললাইনে নিয়ে থমকে গেলেন বার্সেলোনা সেনসেশন। সবাই হতবাক! মেসি কেন দাঁড়িয়ে গেলেন? একটু পরই মিলল উত্তর। বাঁ-পায়ে বল শূন্যে তুলে হেডের সাহায্যে গোল করে মেসি হাসিমুখে তাকান মারকনির দিকে।
http://www.youtube.com/watch?v=9wTL48BlbU0
শনিবার ক্যাম্প-ন্যু স্টেডিয়ামে আর্জেন্টাইন যাদুকরের ওই হাসিমুখ অহরহ দেখল অগণিত ভক্ত। বাল্যকালেই গোলকে নিছক খেলনার কাতারে নামিয়ে আনতে সক্ষম লায়নেল মেসি প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলেও ছাড়িয়ে গেলেন সবাইকে। কাব ফুটবলের অসংখ্য রেকর্ডের অধিকারী এই সুপারস্টার গড়লেন আরেকটি নতুন ইতিহাস। ভেঙে দিলেন ৬০ বছর পূরনো রেকর্ড। মেসিই এখন স্পেনের ঘরোয়া ফুটবলের শীর্ষ আসর লা লিগা ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা। সেভিয়ার বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে তিনি ছাড়িয়ে গেলেন টেলমো জারাকে। ১৯৫৫ সালে ২৫১ গোল নিয়ে একটানা ৬০ বছর রেকর্ডটি ধরে রাখেন অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের স্ট্রাইকার। ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জারার মৃত্যুর সময়ও তার রেকর্ডটি কেউ ভেঙে দেবেন, তা কেউ কল্পনা করারও সাহস দেখাননি। তখন লা লিগায় মাত্র দ্বিতীয় মওসুম চলছে লায়নেল মেসির। সেবার মাত্র সাত গোল করতে সক্ষম হন আর্জেন্টাইন সেনসেশন। এরপরের আট বছরে সবকিছুই ওলট-পালট করে দিলেন মেসি। মাত্র ২৭ বছর বয়সে তিনি বনে গেলেন লা লিগার সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা। ২৮৯ ম্যাচে তার গোলসংখ্যা দাঁড়াল ২৫৩-তে। দেখার বিষয় হচ্ছে এই রেকর্ডটি কতটা উচ্চতায় তিনি নিয়ে যাবেন? তার কাব ক্যারিয়ারের বড় একটা সময় এখনো অবশিষ্ট রয়েছে। ২০০৬-০৭ মওসুমে প্রথমবারের মত স্পট-লাইটে উঠে আসেন মেসি। কোপা দেল রে’র ম্যাচে নিজেদের সীমানা থেকে বল পায়ে দৌড়ে গোল করে দখলে নেন শিরোনাম। তার এই গোলটি ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করা দিয়েগো ম্যারাডোনার গোলের সাথে তুলনা করতেও পিছ পা হয়নি বিশ্বের গণমাধ্যম। ২০০৮-০৯ মওসুমে পেপ গার্দিওলা বার্সেলোনার কোচিং দায়িত্ব গ্রহণ করলে স্পেনের ফুটবলে আর্বিভাব হয় মেসি যুগের। প্রতি নতুন মওসুমেই তিনি বল পায়ের যাদুকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান। গার্দিওলার অধীনে চার মওসুমে করেন ১৩৮ গোল। ২০১১-১২ মওসুমে লা লিগার মেসির করা ৫০ গোল এখনো এক মওসুমের সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড হিসেবে উজ্জ্বলতা ছড়াচ্ছে। পরের মওসুমে মেসি করেন ৪৬ গোল। এর মধ্যে লিগের প্রতিটি দলের বিপক্ষে ধারাবাহিতকভাবে গোল করার বিরল কৃতিত্বও রচনা করতে সক্ষম হন তিনি। ইনজুরির কারণে গত মওসুমের বেশির ভাগ সময় মাঠের বাইরে ছিলেন মেসি। পরে আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপ শেষে কাব ফুটবলে ফিরেই তিনি শিরোনাম হন। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে পেছনে ফেলে চ্যাম্পিয়নস লিগের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা রাউলের ৭১ গোলের রেকর্ড স্পর্শ করেন। সর্বশেষ, বার্সেলোনা ছেড়ে যাওয়ার গুঞ্জন মাথায় নিয়েই তিনি লা লিগার শ্রেষ্ঠ ফুটবলারের তকমা দখলে নিলেন। মেসির নতুন রেকর্ড অর্জনের প্রতিক্রিয়ায় টেলমো জারার মেয়ে কার্মেন বলেন, ‘ আমার পিতা খুশিই হবেন। তিনি (জারা) থাকলে নিশ্চয়ই মেসির বল পায়ের নৈপুণ্যে শিহরিত হতেন। মাঠ ও মাঠের বাইরে তুলনাহীন একজন মানুষ মেসি।’
লা লিগায় মেসি
দল : বার্সেলোনা
মওসুম-১১
ম্যাচ : ২৮৯
গোল : ২৫৩
অ্যাসিস্ট : ১০১
শিরোপা : ৬
>> রুহুল আমিন