আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
পরিকল্পনার অভাবে নিকলীর প্রধান সড়কগুলো ব্যবহারের উপযোগিতা হারাচ্ছে। একদিকে নিকলীর সাথে বিশেষ বিশেষ জায়গাগুলোর সাথে যোগাযোগে ব্যবহৃত যানবাহনের স্ট্যান্ড স্থাপনে অব্যবস্থাপনা, অন্যদিকে নানা ভাবে রাস্তাগুলো ভেঙ্গে পড়ছে। সঠিক সময়ে মেরামত করা হচ্ছে না। নিকলীর ভেতরের রাস্তাগুলোসহ বের হবার মূল রাস্তায়ও যানবাহন চলাচল ও হেটে চলা কষ্টকর হয়ে পড়ছে। আঞ্চলিক এই সমস্যাগুলো নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদের হুবহু তুলে ধরা হলো।
রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর সাথে কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার নদীপথ ব্যতিরেকে স্থল, সড়ক ও জনপথে বেশ কয়েকটি পরিবহন সার্ভিস রয়েছে। কিন্তু একটিরও নির্দিষ্ট কোনো স্ট্যান্ড নেই। এ উপজেলার অতি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলোকেই ব্যবহার করা হচ্ছে এসব পরিবহনের স্ট্যান্ড হিসেবে। বাস সার্ভিস ছাড়া পিকআপভ্যান, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা বা সাধারণ রিকশারও নেই নির্ধারিত কোনো স্ট্যান্ড। ফলে ব্যস্ততম রাস্তাগুলোর ওপরই স্ট্যান্ড, যাত্রী, টিকিট কাউন্টার সব মিলিয়ে উপজেলাবাসীর ‘গোদের ওপর বিষ ফোঁড়া’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিত্য অপরিহার্য কর্মকাণ্ড ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি প্রতিনিয়তই ঘটছে নানা রকম দুর্ঘটনা।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা পরিষদের সামনের রাস্তা ষাইটধার মোড় থেকে চলাচলকারী কিশোরগঞ্জ-নিকলী সিএনজিচালিত অটোরিকশার স্ট্যান্ড। নির্ধারিত কোনো স্ট্যান্ড না থাকায় রাস্তার ওপরই ৩০-৩৫টি গাড়ি সিরিয়ালের জন্য দাঁড়ানো। টিকিট কাউন্টারটিও রাস্তার ওপরে। অপেক্ষমান যাত্রী, চালক এবং স্ট্যান্ডটিকে কেন্দ্র করে মূল রাস্তায় রিকশার জট। এ উপজেলায় প্রবেশ-বাহিরের এটিই একমাত্র রাস্তা। সার্বক্ষণিক জটলা, ভিড়ের কারণে সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহৃত গাড়ি, এমন কি হাসপাতালের রোগী পরিবহনে অ্যাম্বুলেন্সের চলাচলেও বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
এই রাস্তাটি ধরে উত্তরের দিকে রয়েছে বাজার, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, ব্যাংক, থানা, ভূমি অফিসসহ গুরুত্বপূর্ণ অফিস-আদালত। নিকলী-কিশোরগঞ্জ সিএনজি স্ট্যান্ডটি থেকে মাত্র ২শ’ গজ দূরত্বে রয়েছে পিকআপ ভ্যানের ২টি স্ট্যান্ড। স্ট্যান্ড ২টির জন্য নামমাত্র জায়গা ভাড়ায় নেয়া থাকলেও সব কাজ-কাম চলে রাস্তার ওপরেই। এই স্ট্যান্ড ২টির ৫০ গজ উত্তরে মূল রাস্তার ফুটপাতে চট্টগ্রামগামী ‘সুলতানা পরিবহন’ নামের একটি বাস স্ট্যান্ড। এরও উত্তরে উপজেলার অতি গুরুত্বপূর্ণ নিকলী শহীদ স্মরণিকা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মোড়। উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন, প্রাথমিক ও মডেল বিদ্যালয়, কলেজ, বাজার ও বিভিন্ন অফিস-আদালতে যাওয়ার বিকল্পহীন সংযোগস্থল। এই মোড়টিতে গার্লস স্কুলটির প্রধান ফটকের বরাবর সামনে রাস্তার ওপর চট্টগ্রামগামী ‘সুমাইয়া পরিবহন’ নামের বাস স্ট্যান্ড ও কাউন্টার। রাস্তার ওপরেই অটোরিকশা, রিকশা ও ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল স্ট্যান্ড। রয়েছে নিকলী-ভৈরব সিএনজি অটোরিকশারও একটি স্ট্যান্ড। এটির স্ট্যান্ড হিসাবে ভাড়া নেয়া জায়গা থাকলেও ভাড়ার স্থানে কোনো গাড়ি থাকে না। রাস্তার ওপরেই সব।
স্ট্যান্ডগুলোকে কেন্দ্র করে ফুটপাত দখল করে গড়ে উঠেছে দোকানপাট। দিবারাত্র হৈ-হুল্লোড় আর চেঁচামেচির ভিড় ঠেলে স্কুল-কলেজে আসা-যাওয়ায় ছাত্রছাত্রীদের পোহাতে হয় নিত্য বিড়ম্বনা। মোড়টির ১শ’ গজ পূর্বদিকে উপজেলার প্রধান প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানঘেরা ‘এডুকেশন জোন’ হিসেবে পরিচিত নিকলী মুক্তিযোদ্ধা আদর্শ ডিগ্রি কলেজ। কলেজটির প্রধান ফটকের হাত পাঁচেক দূর নিকলী স্টেডিয়াম মাঠে চট্টগ্রামগামী ‘চৌধুরী পরিবহন’ ও ঢাকাগামী বাসস্ট্যান্ড। এ ছাড়াও এই স্থানটিকে এ উপজেলা প্রায় সব ট্রাক লোড আনলোড করার কাজে ব্যবহার করা হয়। এই স্থানটির ১শ’ গজ পূর্বদিকে নতুন বাজার মোড়টিতে রয়েছে একাধিক বাস ও টিকিট কাউন্টার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাস ড্রাইভার জানান, সব বাসেরই স্ট্যান্ডের জন্য ভাড়া নির্ধারণ করা আছে। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এসব ভাড়া উত্তোলন করলেও মূলত নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড এখানে দেখি না। রাস্তাকেই স্ট্যান্ড হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। স্কুল-কলেজের সামনে হওয়ায় আমাদের ও ছাত্র-ছাত্রীদের সমস্যা। এ কথা ছাত্রছাত্রীদেরও।
নিকলী শহীদ স্মরণিকা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শাফী উদ্দিন জানান, মাসিক আইন-শৃঙ্খলা মিটিংয়ে বিষয়টি একাধিকবার উপস্থাপন করা হয়েছে। স্কুলের সামনে থেকে স্ট্যান্ডগুলো সরানোর কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কেন সরানো হচ্ছে না বুঝতে পারছি না।
নিকলী উপজেলার সদ্য বিদায়ী নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহবুব আলমের দায়িত্বকালীন জানান, পাবলিক পরিবহন বলে চট করে নিষেধ করা যায় না। স্ট্যান্ডগুলোকে উপযুক্ত স্থানে সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা চলছে।
ছবি : কারার ইমরান মাহাদী নিয়ন
সূত্র : নিকলীর রাস্তাতেই সব পরিবহন স্ট্যান্ড! (মানবজমিন, ১৯ নভেম্বর ২০১৬)