পপি-রিকলের উদ্যোগে নারীর বিরুদ্ধে পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ দিবস পালিত

popi recall nikli

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

নারী নির্যাতনের ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। একইভাবে নির্যাতনের ধরন ও ভয়াবহতাও লাভ করেছে নতুন মাত্রা। পরিবার থেকে প্রতিষ্ঠান, সমাজ থেকে রাষ্ট্র সর্বত্র আজ নারী ও মেয়েশিশুর নিরাপত্তা প্রশ্নের সম্মুখিন। ‘২৫ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর’ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ হিসেবে পালন করে আসছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে এক হয়ে অক্সফ্যামও বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা ও কর্মসূচির মধ্য দিয়ে এই প্রতিরোধ পক্ষ পালন করছে। প্রতিরোধ পক্ষ পালনের পেছনে রয়েছে কয়েকজন নারী নির্যাতনে মৃত্যুবরণের করুণ ইতিহাস।

ল্যাটিন আমেরিকার ডমিনিক্যান রিপাবলিকের স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে ন্যায়সঙ্গত বিদ্রোহ করায় ১৯৬০ সালের ২৫ নভেম্বর প্যাট্রিয়া, মারিয়া তেরেসা ও মিনার্ভা মিরাবেল নামের তিন বোনকে হত্যা করা হয়। এ ঘৃন্য নির্যাতন নারীরা মেনে নেননি। পুরো ল্যাটিন আমেরিকা ও পরবর্তী সময়ে ইউরোপ জুড়ে সৃষ্টি হয় উত্তাল আন্দোলন। তিন বোনের ওপর নির্যাতনের ঘটনার প্রতিবাদের ধারাবাহিকতায় ১৯৮১ সালে ল্যাটিন আমেরিকার নারীদের এক সম্মেলনে ২৫ নভেম্বরকে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। ১৯৯৩ সালে ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত মানবাধিকার সম্মেলনে দিবসটি স্বীকৃতি পায়।
popi recall nikli
২৬ নভেম্বর শনিবার পপি-রিকল (এলএইচডিপি) নারীর বিরুদ্ধে পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ পক্ষকে সামনে রেখে নিকলী উপজেলার ছাতিরচর ও গুরুই ইউনিয়নে এবং মিঠামইন সদরে নারীর বিরুদ্ধে পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ দিবস উদযাপন করা হয়। এ উপলক্ষে মানববন্ধন, র‌্যালী ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এ বছর নারীর বিরুদ্ধে পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল “রঙ্গিন পৃথিবী রঙ্গিন আলো, সকল নারী থাকুক ভালো”। মানববন্ধন, র‌্যালী ও আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করেন, চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি, সিবিও পর্যায়ে নারী আড্ডা দলের সদস্য ও স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা। দিবস উদযাপনকে সামনে রেখে চেয়ারম্যানগণ বলেন, এলাকায় নারী নির্যাতন প্রতিরোধে বিভিন্ন সভা সেমিনার করার ফলে এলাকায় এখন নির্যাতনের মাত্রা অনেক কমে এসেছে। নারীরা পুরুষের সাথে তাল মিলিয়ে চলছে। আয়মূলক কাজের সাথে যুক্ত হচ্ছে।

ইউপি সদস্য হাজেরা খাতুন বলেন, আমি এক সময় মানুষের সামনে কথাই বলতে পারিনি। আজ আমি একজন ইউপি সদস্য। আমাদের পরিবর্তন নিজেদেরই করতে হবে।

আড্ডা দলের সভাপতি আইরিন বলেন, নারী বলে কখনো পিছিয়ে থাকিনি। আমি নারী, আমি চেষ্টা করলে সব কাজ পারি; তা আমরা আজ অনেক কাজেই প্রমাণ করে দিয়েছি। আমাদের প্রতি হওয়া অন্যায়, নির্যাতন আমাদেরকেই প্রতিরোধ করতে হবে। নারী আড্ডা দলের সভাপতি আমেনা বেগম বলেন, আমি নারী বলে আমাকে সব সময় ছোট হয়ে থাকতে হয়। কিন্তু আমরা কাজের বেলায় সমান কাজ করি। আমি সিবিওর মাধ্যমে সব সময় চেষ্টা করি নারীর বিরুদ্ধে যে কোনো প্রকার নির্যাতন বন্ধ করতে ও অন্যদের সচেতন করতে।

টেকনিক্যাল অফিসার রেশমা পারভীন বলেন, আমরা আমাদের প্রকল্পের মাধ্যমে সব সময় চেষ্টা করেছি নারীদের নির্যাতন মুক্ত রেখে, নারীকে তার প্রাপ্য সম্মান ও মর্যাদার মাধ্যমে তার অধিকার আদায়ে সহযোগিতা করার। পুরুষের পাশাপাশি নারীরা সব ক্ষেত্রে অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করার মাধ্যমে আয়মূলক কাজের সাথে যুক্ত হবে। নারীরা এখন অনেক এগিয়ে আছে। যে নারীরা বাড়িতে বসে থাকতো তারা এখন বাজারে বসে দোকান দিচ্ছেন। বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করছে। বিভিন্ন স্টান্ডিং কমিটিতে নারীরা যুক্ত হয়েছে। প্রকল্প সমন্বয়কারী মোশারফ হোসেন বলেন, আমরা আমাদের সব কাজে নারীকে আগে মূল্যায়ন করি। রিকল প্রকল্প নারীর জীবন মান উন্নয়নের জন্য কাজ করছে। নারীরা যাতে নির্যাতনের শিকার না হয় তার জন্য আমরা বিভিন্ন সময় সভা, সেমিনার ও দিবস উদযাপনের ব্যবস্থা করি আর এর মাধ্যমে সবার মাঝে কিছু তথ্য আমরা দেয়ার চেষ্টা করি। আমরা অনেকটাই সফল। তবে আপনারা যদি আমাদের আরো সহযোগিতা করেন এবং ভালোভালো কাজ করেন তবে এই নির্যাতন বন্ধ হবে।

Similar Posts

error: Content is protected !!