ওয়াজ শোনা হলো না ওরা ১৩ জনের

বিশেষ প্রতিনিধি ।।

মাত্র ৩ দিন পরই গ্রামের বাৎসরিক মেলাটি। এর আগেই বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল। স্বপরিবারে বাড়ি ফিরতে মাইক্রোবাস ভাড়া করে ফিরতে চেয়েছিলো নারী শিশুসহ ওরা ১৩জন। ঘাতক বাস মুহূর্তেই কেড়ে নিলো সবার জীবন। রোববার ১২ ফেব্রুয়ারি লাশের মিছিল ঘিরে প্রকম্পিত হলো কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা নিকলীর নদী আর অবারিত হাওর ঘেরা প্রত্যন্ত ছাতিরচর ইউনিয়নটির আকাশ, বাতাস। মেলা আর ওয়াজের আনন্দ আয়োজন পরিণত হলো শোকোৎসবে।

রোববার সরেজমিনে ছাতিরচরে গিয়ে দেখা যায়, আগামী মঙ্গলবার অনুষ্ঠিতব্য মেলা ঘিরে ইতিমধ্যেই দোকান ঘর তৈরির প্রস্তুতি। মেলার মাঝেই মেলাপূর্ব ওয়াজের প্যান্ডেলের ডেকোরেশন প্রায় শেষ। রাতেই মাহফিল অনুষ্ঠিত হবার কথা থাকলেও সমস্ত আয়োজন পড়ে আছে অবহেলায়। আসছে স্বজনদের লাশের মিছিল। তাইতো নদী পাড়ে লাশের প্রতীক্ষায় শত শত নারী-পুরুষের আহাজারী প্রতীক্ষা।

accident-lash-grohon

কয়েকজন এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, নদী ভাংগনের শিকার হয়ে এই এলাকার অনেক পরিবার এখন ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের অনেক শহরে। ঢাকার কামরাঙ্গিরচরের মাতবরের এলাকা থেকে বাড়ি ফিরতে ভোর ৬টায় মাইক্রোবাসযোগে রওনা হয় নারী, শিশু ড্রাইভার হেলপারসহ ১৩ জন। সাড়ে সাতটার দিকে নরসিংদীর বেলাবোর কাছে কেওড়াকান্দি নামক স্থানে আসতেই নিয়ন্ত্রণহীন একটি বাসের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় মাইক্রোবাসটির। বাসে থাকা ড্রাইভার (পরিচয় জানা যায়নি), একই গ্রামের হেলপার হিরা (৩০), মানিক মিয়া (৫৫), তার স্ত্রী মফিয়া (৪৫), পুত্রবধূ শারমীন আক্তার (২৩), ২য় শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে অন্তর (৯), পাশের বাড়ির নাজমুল (২৫), তার বড় বোন সাধনা (৩৫), ছাতিরচর পুরান বাজার এলাকার হাছান আলী (৩০), তার স্ত্রী হালিমা (২৫), শ্যালিকা ঝুমা (১৬), ছেলে ঈশিন (৭) ও কুতুব উদ্দিনের স্ত্রী ফেরুজা (২৮) নিহত হন।

ছাতিরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিনের তত্ত্বাবধানে নিহতদের লাশ বিকাল ৩টায় এলাকায় এসে পৌছলে অবর্ণন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ওয়াজ মাহফিলের প্যান্ডেলের সামনে নামাজে জানাযা শেষে সন্ধ্যায় স্থানীয় গোরস্থানে সকলের দাফন সম্পন্ন হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নিকলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কারার সাইফুল ইসলাম, ইউএনও নাসির উদ্দিন মাহমুদ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সোহেল রানাসহ কয়েক হাজার এলাকাবাসী।

Similar Posts

error: Content is protected !!