হাওরের জনগোষ্ঠীর বৃহৎ অংশ এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে

আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।

সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার প্রায় চার হাজার ৪৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত হাওর অঞ্চলে বছরের ছয় থেকে সাত মাস পানিতে প্লাবিত থাকে। এ অঞ্চলের বেশিরভাগ স্থানেই শুধু শীতকালে ফসল চাষ হয়। বর্ষাকালে সীমিত পরিসরে মাছ ধরা ছাড়া অধিকাংশ কৃষকের আর কোনো কাজ থাকে না। হাওর এলাকায় নিয়মিত আয়ের সুযোগের অভাবে সেখানকার জনগোষ্ঠী দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না, যার কারণে দেশের মোট জনগোষ্ঠীর বৃহৎ অংশ এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্টজন।

বাংলাদেশের হাওর অঞ্চলে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর টেকসই উন্নয়ন শীর্ষক পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) আয়োজিত ১৪ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সংস্থার নিজস্ব দফতরে সেমিনারে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন। পিকেএসএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: আবদুল করিমের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্থার চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। বক্তব্য রাখেন, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরএ) এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান অমলেন্দু মুখার্জি, পিকেএসএফের ডিএমডি ড. মো: জসিম উদ্দিন। হাওর এলাকায় কর্মরত বিভিন্ন সংস্থাসহ পিকেএসএফের নির্বাচিত ৪০টি সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ইকবাল আহাম্মদ এবং পল্লী বিকাশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক হাসান আলী দু’টি উপস্থাপনা প্রদান করেন।

উপস্থাপনায় উল্লেখ করা হয়েছে, পিকেএসএফ ২০০৯ সালে হাওর এলাকার পিছিয়ে পড়া দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বিকল্প ও বৈচিত্র্যময় কর্মসংস্থানের সুযোগ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে লিফট কর্মসূচির আওতায় ‘হাওর এলাকার অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষায়িত ঋণ কার্যক্রম’ বাস্তবায়ন শুরু করে। প্রাথমিকভাবে কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী, মিঠামইন এবং অষ্টগ্রাম উপজেলা, হবিগঞ্জ জেলার আজমিরিগঞ্জ উপজেলা এবং সুনামগঞ্জ জেলার সাল্টা উপজেলায় উদ্যোগটির বাস্তবায়ন শুরু করা হয়; যা বর্তমানে চলমান রয়েছে। এ কর্মসূচির আওতায় এ পর্যন্ত ২২,০৩৮ জন অতিদরিদ্র সদস্যের মধ্যে ২৯ কোটি ৭০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। সদস্যরা নমনীয় শর্তে ঋণ প্রাপ্তির মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের আয়বর্ধনমূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হতে পারায় তাদের পারিবারিক আয়, সামাজিক মর্যাদা ও নারীর ক্ষমতায়ন তথা পারিবারিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সর্বোপরি হাওর অঞ্চলের অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর টেকসই উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়েছে।

ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জনে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে জাতীয়-স্থানীয় সব পর্যায়ে যথাযথ সমন্বয় আবশ্যক। সবাইকে মিলে হাওর এলাকার জন্য উপযুক্ত, বাস্তবায়নযোগ্য, সুনির্দিষ্ট, দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।

অমলেন্দু মুখার্জি বলেন, হাওর অঞ্চলকে বাদ দিয়ে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি সম্ভব নয়; সুতরাং, হাওরবাসীর দারিদ্র্য নিরসনে পিকেএসএফ প্রকল্প গ্রহণ করলে সরকারের পক্ষ থেকে যাবতীয় সহযোগিতা প্রদান করা হবে।’

আবদুল করিম বলেন, দেশের মোট জনগোষ্ঠীর যে বৃহৎ অংশ এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে, তাদের মধ্যে হাওরবাসী অন্যতম। অত্যন্ত দুর্গম, প্রত্যন্ত অঞ্চল হওয়া সত্ত্বেও হাওর এলাকায় বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর ভাগ্য উন্নয়নে বিভিন্ন সহযোগী সংস্থার মাধ্যমে পিকেএসএফ নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।

Similar Posts

error: Content is protected !!