মীর কবির উদ্দিন ।।
পারদিয়াকুল এলাকায় মুন্সী মিয়া নামে একজন প্রভাবশালী লোক ছিলেন। ধারণা করা হয় তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর মৃত্যু দিবসটিকে কেন্দ্র করে এই মেলার ব্যুৎপত্তি ঘটে। তবে, কবে থেকে এ মেলার উৎপত্তি হয় সেটা সঠিকভাবে দিন তারিখ জানা যায়নি। উনার নামের সুবাদে এলাকার সবাই এ তাঁর বাড়িকে মুন্সীবাড়ি নামেই চেনে। আর তাঁকে ঘিরে যে মেলার চলন আছে সেটিকে মুন্সীবাড়ির মেলা বলেই এলাকায় জানে। যে কোন ধরনের অযাচিত ঘটনা এড়ানোর লক্ষ্যে এ মেলাটি একটি কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে। মেলার সার্বিক কর্মকাণ্ড এই কমিটিই পরিচালনা করে থাকে।
এই মেলা প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসের ১৩ তারিখ থেকে শুরু হয়ে চলে ১৫ তারিখ পর্যন্ত। মেলাকে ঘিরে চলে মেয়েকে ও মেয়ের বাড়ির লোকজনদের নাইওর আনা অথবা জামাই ও জামাইয়ের বাড়ির লোকজনদের দাওয়াত। এই মেলার সময়ে পাড়দিয়াকুল, দিয়াকুল, চুমুকপুর, বাগজুরকান্দি, নখলা, আতখলা, বাট্টা, নওবাড়িয়া, পূরুরা প্রভৃতি এলাকাতে পুরো উৎসবের আমেজ তৈরি হয়।
মেলার প্রধান আকর্ষণ থাকে উরহা, বিন্নি, খেলনা (চিনি বা গুড় দিয়ে তৈরি বিশেষ এক ধরনের খাবার), নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও পাওয়া যায় এই মেলায়। তবে, এলাকাবাসী জানান, মেলায় কোন ধরনের অশ্লীল কার্যক্রম না হলেও জুয়া খেলা হয়ে থাকে। যা ঘটে থাকে জনগণের চোখকে ফাঁকি দিয়ে ও সাধারণের আড়ালে আবডালে। পুলিশকে ম্যানেজ করে। মেলায় দেদারছে লটারি খেলা হচ্ছে। আর পুরস্কার হিসাবে থাকে বিভিন্ন অখ্যাত কোম্পানির ১০০০ টাকা দামের মোবাইল ফোন। প্রতিদিন ৬০/৭০টি টিকেট বিক্রি হয়। বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক কাজের জন্য মেলায় দোকান বসানোর জন্য কমিটির মাধ্যমে কিছু টাকা নেয়া হত। সে মোতাবেক গত বছর দোকান প্রতি ২০ টাকা নেয়া হয়েছিল। কিন্তু এই বছর কমিটির লোকজন দোকানদারদের কাছ থেকে জমা নিয়েছে ১০০ টাকা করে। আমাদের নিকলী ডটকম-এর প্রতিনিধিকে বিক্রেতাগণ জানান, জমার পরিমাণ বৃদ্ধি অনুপাতে সেবা পান না।
আমাদের নিকলী ডটকম-এর প্রতিনিধির কথা হয় বিভিন্ন দোকানীর সাথে। মেলায় অনেক বড় মাছও বিক্রি হয়। মেলায় আগত মাছ ব্যবসায়ী ইনছর আলি, লাল মিয়া এই প্রতিনিধিকে জানান, মেলায় মাছ বিক্রি করলেও আলো স্বল্পতায় কমিটির কাছে বাতির জন্য আবেদন করলেও তারা বাতির ব্যবস্থা করেন না। আর তাতে ব্যবসায়ীগণ ক্ষতিগ্রস্ত হন।
মুন্সীবাড়ির মেলাকে কেন্দ্র করে এ বছর একটি বিরাট আকৃতির বইয়ের স্টলও বসে। অনেকে সেটাকে বইমেলা হিসাবেও নাম দেন। জান্নাত বুক ডিপো নিজেদের উদ্যোগে এই মেলার আয়োজন করে এবং আশা প্রকাশ করেছে যে, তারা প্রতিবছরই এই রকম মেলায় উপস্থিত হবে। মুন্সিবাড়ি মেলার পাশাপাশি হওয়ার ফলে বই বিক্রিতে কিছুটা ভাটা পড়েছে তবে বিক্রি তুলনামূলকভাবে ভালই। জান্নাত বুক ডিপোর পক্ষ থেকে বিভিন্ন শ্রেণীতে সাধারণ জ্ঞানের প্রতিযোগিতার আয়োজন ছিল। বইমেলাটি আরো কয়েকদিন চলবে। বইমেলা উদ্বোধন করেন হাজী মোঃ আবুল ফজল উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক সহ-সভাপতি সৈয়দ আহমাদুজ্জান। স্কুলের কর্তৃপক্ষ মেলায় আগত স্টলের লোকদের আপ্যায়ন করেন।
বিভিন্ন বিষয়ে বইমেলায় আগত স্টল ও তাদের লোকজনদের সহযোগিতা করেছেন হাজী মোঃ আবুল ফজল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছাঃ নাছরিন নাহার।