রোববার। ছুটির দিন। প্রবাস জীবনে ব্যস্ততম সময়ের মাঝে এমন একটা দিন খুবই কাঙ্ক্ষিত। অনেক বেলা করে ঘুম থেকে উঠেছি। ঘুম ভাঙার দু’ ঘণ্টা আগ থেকে জেগে জেগে ঘুমাচ্ছি। হঠাৎ কানে বাজতে থাকলো বিজ্ঞাপনের শব্দ। “… শ্যাম্পু চুল পরা বন্ধ করে”, “পুরোটাই আম, স্বাদে ভরপুর”, “বাদাম প্রচুর, … চানাচুর” ইত্যাদি।
আর তখনই মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো। টেলিভিশনের বিজ্ঞাপনের মতোই আমাদের দেশের দায়িত্বশীলরা স্লোগান দিয়ে যাচ্ছেন। মুখে দেশপ্রেমের কথা বলা হলেও বাস্তবতায় তেমন মিল পাওয়া যায় না। বিশেষ বিশেষ দিনগুলো এলেই শহীদ মিনার, স্মৃতিসৌধ, বিভিন্ন স্মৃতিস্তম্ভসহ উল্লেখযোগ্য স্থানগুলো ফুলে আর আল্পনায় রঙিন করে তোলেন। ২৪ ঘণ্টার দিন শেষ, ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার কমিটমেন্টও যেন ফুরিয়ে যায়! বছরের বাকি দিনগুলোতে এই বিশেষ স্থানগুলোর অবস্থা কার না জানা?
কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলাও এর তেমন ব্যতিক্রম নয়। জাতীয় দিবসগুলো পালনে হুড়োহুড়ি লেগে যান। কিন্তু কখনো কি একবার ভেবেছেন, এই দিবসগুলো কেন, কিভাবে, কাদের অবদানে আমাদের সামনে এসেছে? আমরা কেনই-বা এই দিনগুলো বিশেষ গাম্ভীর্য বজায় রেখে পালনের আনুষ্ঠানিকতা করে থাকি? যারা আমাদের এনে দিয়েছেন এই অহংকার, তাদেরই-বা কিভাবে মূল্যায়ন করছি? তাদের মধ্যে যারা গত হয়েছেন সেই স্বজনহারা পরিবারের সদস্যদের প্রতি কী-ই বা দায়িত্ব পালন করছি আমরা? উত্তর খুব সহজ, সবারই জানা।
আসুন, সবাই মিলে একবার অন্তত কিছু দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসি। কিছু পরিকল্পনা হাতে নেই। ধীরে ধীরে বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাই। প্রকৃত অর্থে বাস্তবিক জীবনে সম্মান দেখাই সেই দেশপ্রেমে আত্মত্যাগী জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি। যারা আমাদের গর্ব করার সুযোগ করে দিয়েছেন। যাদের অবদানে আমরা মাথা তুলে বিশ্ব দরবারে আজ দাঁড়িয়ে আছি।
নিকলীর সকল শ্রেণীর মানুষের কাছে আমার সুনির্দিষ্ট ক্ষুদ্র কয়েকটি প্রস্তাবনা তুলে ধরছি। স্মৃতিগুলো হারিয়ে যাওয়ার আগেই এ প্রজন্মের কাছে তথ্যগুলো তুলে ধরা খুব জরুরি।
* ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিকলীর কতজন শহীদ হয়েছেন?
* দেশের জন্য, সমাজের জন্য আত্মত্যাগী জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের মধ্যে যারা জীবিত আছেন তারা কেমন আছেন?
* যারা শহীদ হয়েছেন তাদের পরিবার-পরিজনের দিন কেমন কাটছে?
* নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচয় করিয়ে দেয়ার লক্ষে বিশেষ ব্যক্তিদের নিয়ে নিয়মিত আলোচনার ব্যবস্থা করা।
* বিশেষ ব্যক্তিত্ব, ঐতিহাসিক ঘটনা আর স্থানগুলোর গুরুত্বের আলোকে স্থানীয় পর্যায়ে প্রকাশনার ব্যবস্থা করা।
* বিশেষ ক্ষেত্রে রাস্তা, ভবন, উল্লেখযোগ্য স্থাপনার অর্থপূর্ণ নামকরণের ব্যবস্থা করা।
আশা করি স্থানীয় ও বিভিন্ন পর্যায়ে নীতি-নির্ধারক মহল এই ক্ষুদ্র প্রস্তাবনাগুলো ভেবে দেখবেন। নতুন প্রজন্মকে জানতে সুযোগ করে দেবেন। জানতে দেবেন আমাদের প্রকৃত ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি।
লেখক : কোরিয়া প্রবাসী