বিশেষ প্রতিনিধি ।।
কিশোরগঞ্জের নিকলীতে নোয়াপাড়া মৎস্যজীবি সমিতি নামের একটি সংগঠনের বিরুদ্ধে জলমহাল সেচে মাছ ধরার প্রতিবাদ করায় বোরো আবাদী কৃষক নেতাদের মিথ্যে মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় জলমহালটির লিজ গ্রহিতা ও জলমহাল পাড়ের কৃষকদের মধ্যে বিরাজ করছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের উত্তেজনা।
জানা যায়, নিকলী উপজেলার দামপাড়া মৌজার চকচকিয়া, চাকিডুয়ার ও নলুয়া নামের ৩টি বিল নোয়াপাড়া মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি নামে একটি সংগঠন ১৪২২ বাংলা সন থেকে ১৪২৭ বাংলা সন পর্যন্ত ইজারা নেয়। বাইছাতুল নামের একটি লিজহীন বিলও দখলে নেয় সংগঠনটি। প্রকল্পের অধীন ইজারা নিলেও বিধি উপেক্ষা করে প্রতিবছর বোরো মওসুমে অধিক মাছ ধরতে বিলের পানি সেচে শুকিয়ে ফেলে ইজারাদার চক্র। বিল পাড়ের প্রায় আড়াই হাজার একর জমি হুমকির মুখে পড়ে।
কৃষকদের প্রতিবাদের তোয়াক্কা করে না ইজারাদাররা। এই মর্মে গত বছরের অক্টোবর মাসে বিলের দুই পাড়ের ১০৮জন কৃষকের স্বাক্ষর সংযুক্ত একটি লিখিত অভিযোগ কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবর দাখিল করেন মইচ উদ্দিন নামে এক কৃষক নেতা। এ বছর বোরো আবাদ শুরু হলে ১৩ ফেব্রুয়ারি চকচকিয়া বিলের সাড়ে ১১ একর জলাশয় সেচে মাছ ধরতে গেলে পানিশূন্যতায় বিল পাড়ের বোরো জমি ফেটে ধানক্ষেত লালচে বর্ণ হয়ে উঠে। কৃষকরা প্রতিবাদী হয়ে উঠলে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্দেশে দামপাড়া ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা ব্রজেন্দ্র চন্দ্র সূত্রধর ১৫ ফেব্রুয়ারি বিল ৩টির সাড়ে ৪৮ একর জলাশয় ইজারা গ্রহিতা সংগঠনকে বুঝিয়ে দিলেও বিলের পানিশূন্যতা বিষয়ক কোনো ব্যবস্থা নেননি।
১৬ ফেব্রুয়ারি কৃষকদের মৌখিক অভিযোগ পেয়ে একাধিক জাতীয় দৈনিকের স্থানীয় প্রতিনিধিরা সরেজমিনে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পান। এসময় বিল পাড়ের জমি পানিশূন্যতায় লালবর্ণ ধারণ, বিল থেকে জমিতে পানি তোলার পরিত্যক্ত সেচ পাম্প ও পানিশূন্য বিলে ইজারাদারদের মাছ ধরতে দেখা যায়। কাঁদো কাঁদো কয়েক কৃষক ইজারাদারদের কাছে তাদের অসহায়ত্বের কথা উল্লেখ করেন।
সাংবাদিকরা ফিরে আসলে রাতেই বিলে পানি ভরাট করার চেষ্টা করে চক্রটি। ১৭ ফেব্রয়ারি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের নাজির মোজাম্মেল হক পরিদর্শনে গিয়ে পানিভর্তি বিল দেখতে পান বলে এ প্রতিনিধিকে জানান। ২০ ফেব্রুয়ারি চকচকিয়া বিলে লুট, তছনছ ও হুমকির কথা উল্লেখ করে নোয়াপাড়া মৎস্যজীবি সমিতির সম্পাদক মতিউর রহমান বাদী হয়ে নিকলী থানায় কৃষক নেতা মইছ উদ্দিনসহ ১৬ জনের নাম ও অজ্ঞাত ১০/১২ জন উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেন। যার নং-০৪(২০/০২/১৭)। ঘটনার সময় উল্লেখ করা হয় ১৬ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৫টা থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি ভোর পর্যন্ত কোন সময়।
মইছ উদ্দিনসহ শতাধিক কৃষক জানান, এভাবেই মামলা হামলার ভয় দেখিয়ে ক্ষমতাসীন একটা চক্রের সহযোগিতায় আমাদের হয়রানি করছে। গেলো বর্ষায়ও তাদের লীজ নেয়া জলাশয় হতে কয়েক কিলোমিটার দূর থেকে এক জেলেকে তারা পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করায়। ওই দিন রাতেই এলাকার সহস্রাধিক মানুষ মিছিল করে নিকলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কারার সাইফুল ইসলামের মধ্যস্থতায় সেই জেলেকে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনি।
নোয়াপাড়া মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান এ প্রতিনিধিকে জানান, লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে জলমহালটি সাজিয়েছি। রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছি। বিলের পানি এই মওসুমে এমনিতেই শুকিয়ে যায়। আমরা শুধু পানি কমে যাওয়ায় মাছ ধরেছি। মাছ চুরি, বিলের প্রয়োজনীয় সম্পদ তছনছ ও হুমকি দেয়ায় মামলা করতে বাধ্য হয়েছি।