আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ মঙ্গলবার ১৪ মার্চ হাওর অঞ্চলের বিত্তবানদের সাধারণ জনগণ, বিশেষত সমাজের সুবিধাবঞ্চিতদের প্রতি মানবতার এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে আহ্বান জানিয়েছেন। মঙ্গলবার অষ্টগ্রাম উপজেলার রোটারি ডিগ্রি কলেজ প্রাঙ্গণে প্রতিষ্ঠানটির রজতজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সুবিধাবঞ্চিত জনগণকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তার জন্য এগিয়ে আসুন। সকলের উচিত তাদের স্ব স্ব অবস্থান থেকে হাওর অঞ্চলের উন্নয়নে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখা’। বাসস
তিনি বলেন, ‘আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বে একটি রোল মডেল। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে গণতন্ত্র এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা উন্নয়নের জন্য জরুরি। একটি দেশে সহিষ্ণুতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং এর গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহ শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে গণতন্ত্র সমৃদ্ধ হয়।’
দেশের উন্নয়নের ধারা তুলে ধরে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রাম এখনো অব্যাহত আছে এবং দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন নেতিবাচক বৈশ্বিক প্রভাব সত্ত্বেও বাংলাদেশ বিগত বছরগুলোতে তার জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ ধরে রেখেছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, উন্নয়ন ও টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিতকরণ এবং সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা এখন আর স্বপ্ন নয়, বরং বাস্তব।
রাষ্ট্রপতি বলেন, মাথাপিছু আয় বেড়েছে, দারিদ্র্যের হার কমেছে এবং আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি পেয়েছে। এগুলোর পাশাপাশি কর্মসংস্থান, আয় এবং খাদ্যশস্য উৎপাদন বেড়েছে।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে হাওরাঞ্চলের জনগণের দুঃখ-কষ্টের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এ অঞ্চলের একজন বাসিন্দা হওয়ায় আমি হাওরে আপনাদের সমস্যার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত। আমি আপনাদের (সাধারণ জনগণ) সমর্থন নিয়ে রাজনীতি করি।’ ‘একেবারে প্রথম থেকেই আমার সামর্থ্যের মধ্যে আমি আপনাদের সমস্যাগুলো উত্তরণের চেষ্টা করছি। হাওর অঞ্চলের জনগণ ইতোমধ্যে ব্যাপক উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করেছে কিন্তু এখানকার ভৌগোলিক কারণেই বৃহদাকার প্রকল্প গ্রহণ করা সম্ভব না।’
রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন, এই অঞ্চলে অবকাঠামোগত খাতে সন্তোষজনক পরিবর্তন আসবে, কেননা বর্তমান সরকার এ ধরনের উন্নয়ন নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে। তিনি ছাত্র রাজনীতি থেকে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সূচনার কথা স্মরণ করে বলেন, ‘আমি কয়েকবার জেলে গিয়েছি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আমি এমএনএ (জাতীয় পরিষদ সদস্য) পদে নির্বাচন করেছি। তখন থেকে আমি আপনাদের মঙ্গলের জন্য কিছু করার চেষ্টা করছি। কিন্তু আমি আজ পর্যন্ত অনেক কিছুই করতে পারিনি, যা আমাকে সবসময়ই পীড়া দেয়।’
আবেগজড়িত কণ্ঠে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তাঁর বেশ কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও প্রিয়জনের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান, যারা কেউই এখন আর বেঁচে নেই।
রাষ্ট্রপতি শিক্ষার মানোন্নয়নের ব্যাপারে বিশেষ মনোযোগ দেয়ার জন্য সমাজের জনগণ ও হাওর অঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান।
‘প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টেকসই উন্নয়ন এবং আধুনিকায়নের জন্য শিক্ষার কোন বিকল্প নেই’ উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা নিজেদেরকে সৃষ্টিশীল এবং জাতি গঠন কাজে দক্ষ করে তোলে।’
আবদুল হামিদ বলেন, অনেকেই তাঁর (রাষ্ট্রপতি) কাছে চাকরির জন্য আসেন, কিন্তু তারা নিয়োগ প্রক্রিয়ার লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হয়। জনপ্রশাসনে যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগের ওপর গুরুত্বারোপ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কিছু নিয়ম-কানুন আছে, যেখানে অযোগ্য প্রার্থীদের চাকরির জন্য সুপারিশ করা যায় না।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন- স্থানীয় সংসদ সদস্য রেজোয়ান আহমেদ তৌফিক, মোহাম্মদ সোহরাব উদ্দিন ও মোহাম্মদ আফজাল হোসেন এবং কলেজের অধ্যক্ষ মোজতবা আরিফ খান।
ছবি : পিআইডি