আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
দেশের যেকোনো প্রান্তে ভূমির ওপর ঘরবাড়ি বা স্থায়ী কোনো স্থাপনা করলেই সরকার মনোনীত কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হবে। যেখানে কর্তৃপক্ষ নেই সেখানে কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করা হবে। এ আইন অমান্য করলে পাঁচ বছরের জেল এবং ৫০ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হবে। এ ধরনের বিধান রেখে ‘নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা আইন, ২০১৭’-এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার ২০ মার্চ সচিবালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেছেন, অত্যন্ত কঠোর এ আইনটি করা হচ্ছে দেশের কৃষিজমিসহ ভূমির সঠিক ব্যবহারের জন্য। বর্তমানে বাড়িঘর নির্মাণের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ বা জেলা পর্যায় থেকে অনুমোদন নেয়ার নিয়ম রয়েছে। তবে সে নিয়ম পালন করা হয় না। এ কারণেই বিষয়টি আইনে পরিণত করা হচ্ছে। এর ফলে ভূমি ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আসবে এবং পরিকল্পিতভাবে ভূমি ব্যবহার সম্ভব হবে।
মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে একজন সাংবাদিক জানতে চান, তার গ্রামের বাড়িতে তিনি ঘর বানাতে চান; এ অবস্থায় তিনি কার অনুমোদন নেবেন? জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, গ্রাম এলাকায়ও কোনো উন্নয়নমূলক কাজ করতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র নিতে হবে। দেশের যেকোনো জমি ব্যবহার করতে হলেই কর্তৃপক্ষের অনুমোদন লাগবে।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘শুধু কৃষিজমিই যে নষ্ট হচ্ছে তা নয়। ভূমি নানাভাবে নষ্ট হচ্ছে। ইটভাটায় সবচেয়ে উর্বর মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে। এই আইন হলে এ সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।’
বিশিষ্ট নগর বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নজরুল ইসলামের মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই আইনটি কার্যকর হলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়বে। কারণ প্রয়োজনীয় জনবল নেই। ঢাকাতেই সেবা পাওয়া যায় না, সেখানে গ্রামে সেবা কে দেবে? তবু আইনটি দরকার। কারণ প্রতিবছর কৃষিজমি কমছে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি খারাপ হবে। তাই আইনটি কার্যকর করার আগে প্রশিক্ষিত জনবল নিয়োগ দিতে হবে।’
তবে পূর্তসচিব শহিদ উল্লা খন্দকার বলেন, ‘সারা দেশের মাত্র ৫ শতাংশ ভূমির মাস্টারপ্ল্যান আছে। এসব ভূমি বিভিন্ন উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অধীনে রয়েছে। অবশিষ্ট ৯৫ শতাংশ জমির কোনো মাস্টারপ্ল্যান নেই। এ কারণে আমরা একটা মাস্টারপ্ল্যান করে ভূমির পরিকল্পিত ব্যবহার নিশ্চিত করতে চাই। কৃষিজমিতে ঘরবাড়ি করা হলে কৃষিজমি কমবে—এটাই স্বাভাবিক। নালা বা জলাশয় ভড়াট করলে পরিবেশের বিপর্যয় হবে। সব কিছু মিলে ভূমির পরিকল্পিত ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। আইনটি পাস হলে আমরা সব জমির শ্রেণিবিভাজন করব। দুই ফসলি বা তিন ফসলি জমিতে বাড়ি করা যাবে না। বাড়ি করার অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্টদের ঢাকা বা কোনো বিভাগীয় শহরে যেতে হবে না। তারা বাড়ির পাশের ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সে অনুমোন পাবেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে এসব বিষয় তদারক করা হবে। কারো কোনো ভোগান্তি হবে না।’
খসড়া আইনে বলা হয়েছে, ভূমির সার্বিক বিষয় তদারক করার জন্য গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রীর নেতৃত্বে ২৭ সদস্যের একটি নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হবে। আইন কার্যকর হলে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে কোনো জমি ব্যবহার বা উন্নয়ন করার জন্য এই উপদেষ্টা পরিষদের কাছ থেকে ছাড়পত্র নিতে হবে। তবে উপদেষ্টা পরিষদ ছাড়পত্র দেওয়ার জন্য অন্য কোনো কর্তৃপক্ষকে ক্ষমতা দিতে পারবে। উপদেষ্টা পরিষদের কর্মপরিধি নির্ধারণ করে দিয়ে খসড়া আইনে বলা হয়েছে, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা এবং ভূমি ব্যবহার ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন দেবে এই পরিষদ। প্রচলিত অন্য কোনো আইন বা বিধিতে যাই থাকুক না কেন বিভিন্ন সংস্থা, প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি এই পরিষদের সুপারিশ অনুসরণ করবে। পরিষদের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজের মধ্যে থাকবে—নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা এবং ভূমি ব্যবহার ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদন করা; সরকারি সংস্থার নেয়া উন্নয়নকাজ এ আইনের আওতায় প্রণীত পরিকল্পনার সাথে সমন্বয় করা; সব অধিদপ্তর, সংস্থা বা কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা ও ভূমি ব্যবহার সংক্রান্ত কাজের বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেয়া।
এ ছাড়া দৈনন্দিন কাজ করার জন্য থাকবে একটি নির্বাহী পরিষদ। এ পরিষদের চেয়ারম্যান হবেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব। অন্যান্য সদস্য মিলে এটা হবে ২৫ জনের কমিটি। এখানে বিশেষজ্ঞসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা থাকবেন। উপদেষ্টা পরিষদের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করবে এ পরিষদ।
সূত্র : গ্রামে বাড়ি করতেও অনুমোদন লাগবে (কালের কণ্ঠ)