মাঝে মাঝেই পুরাতন অনেক স্মৃতি দোলা দেয় মনে প্রাণে। অনেক সময় তা স্থায়ীত্ব পায় আবার কখনও তা খুব দ্রুতই হারিয়েও যায়। এমনই এক পুরাতন স্মৃতি আজ বারবার কড়া নাড়ছে আমার মনে। তা-ও আবার অন্য কারো কথায় নয়, সে আমাদের নতুন প্রজন্ম- আদিবের কথায়।
বিভিন্ন সময়ের স্মৃতিকথা যা আমি আমার ছেলেকে বলে থাকি। তারই একটি স্মৃতিকথা নিকলী জিসিপি হাইস্কুলের তৎকালীন সহকারী শিক্ষক ফরিদ স্যারের (পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষক হিসাবে অবসর গ্রহণ করেন) একদিনের ক্লাসের অবসরে বলা একটি ঘটনা বলছি। স্যার তখন আমাদের ইংরেরি ক্লাস নিতেন। স্যার পড়া বুঝানোর ক্ষেত্রে খুবই পটু ছিলেন। তাই কোনো ছাত্র অমনোযোগী হলে পুরো ক্লাসটিকেই ভিন্ন দিকে মোড় দেয়াতেন। এভাবেই ঘটেছিল সেদিনের ঘটনাটি।
স্যারের বাড়ি (মজলিশপুর) এলাকায় প্রসিদ্ধ একজন ফকির ছিলেন। যাঁর নাম ছিল “ডেগ্গা ফকির”। মজলিশপুর বাজার তখন খুব একটা জমজমাট ছিল না (সোম ও শুক্রবার হাটবার হওয়ায় সে দিনগুলোতে জমজমাট থাকত)। দামপাড়া বাজার তখনও জমজমাট ছিল। দামপাড়া বাজারে নিত্যদিনকার জিনিস থেকে শুরু করে সবই মিলত।
ডেগ্গা ফকির চুল কাটানোর উদ্দেশে সেলুনে হাজির। চুল কাটিয়ে তিনি এদিক সেদিক ঘুরছেন। তার কিছু অনুসারি ছিলেন। সেই লোকগুলো তাকে সব কাজেই অনুসরণ করত। এতে তিনি অনেক বিরক্ত বোধ করতেন। তিনি চুল কাটিয়ে বের হওয়ার পর তাদেরই একজন জিজ্ঞেস করলেন ‘ফকির, চুল কোথায় কাটালেন?’ তিনি যথারীতি উত্তর দিলেন ও সেলুনের নাম বলে দিলেন। তার অনুসারীরা ওই সেলুনে সেদিন চুল কাটার হিড়িক এবং সেটি যার তার নয়, ডেগ্গা ফকিরের স্টাইল।
ফকির দেখলেন, তার চুলের আকৃতিতে তো চুল কাটিয়ে অনেকেই ঘুরছে। কয়েকদিনের ঘটনার পরিক্রমায় তিনি খুব রাগ হয়ে আবার যান সেলুনে। বেশ কয়েকবারের এমন ঘটনার পর একদিন তিনি খুব রেগে নরসুন্দরকে (আঞ্চলিক ভাষায় নাপিত) বললেন, আমার চুল এমনভাবে ছেঁটে দাও যেন কেউ আর আমার নকল না করে। নরসুন্দর কথা বুঝতেছিল না, কিভাবে তিনি চুল কাটবেন! পরে তিনিই দিলেন কিভাবে হবে তার চুল কাটার নমুনা।
তা হলো : মাঝখানে একটি বৃত্ত মতো করে কেটে ফেলে দিতে হবে। চারদিকে থাকবে কালো কেশরাশি। তিনি তা-ও বলেছিলেন দেখি এবার আমার দেখাদেখি কে কাটে চুল? সত্যিই সেদিনের পর তাকে আর কেউ এ বিষয়ে অনুসরণ করেনি। কারণ, সেটি ছিল নিতান্তই ভিন্ন।
মনে পড়ে সে দিনগুলো স্যার শ্রদ্ধাভরে। ব্যতিক্রমী কোনো ঘটনাপ্রবাহে আর কেউ না হলেও আমার ছেলে আদিব আমাকে মনে করিয়ে দেয় আপনার কথা। আমার লেখায় যদি কোনো ভ্রান্তি থেকে থাকে তাহলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন স্যার। অনেক পুরনো কথা ঠিক সেভাবে হয়তো আমার মনে না-ও থাকতে পারে।