হাওরাঞ্চলে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন দাবিতে মানববন্ধন

বিশেষ প্রতিনিধি ।।

অকাল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হাওরাঞ্চলকে দুর্গত এলাকা ঘোষণাসহ বিভিন্ন দাবিতে ঢাকাস্থ নিকলী সমিতি শুক্রবার বিকাল ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনের আয়োজন করে। এতে সংগঠনটির সভাপতি বাবুল সুনীল সাহা, সাধারণ সম্পাদক মুশতাক আহম্মদ লিটন, নিকলী উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন মোল্লা, ঢাকাস্থ নিকলী সমিতির অন্যান্য কর্মকর্তাসহ বিপুলসংখ্যক নিকলীবাসী উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের পক্ষে উল্লেখ করা হয়, অকাল বন্যায় হাওরাঞ্চলে প্রাকৃতিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। এ বছরের মার্চ থেকে শুরু হয়ে একের পর এক ফলন্ত ধানের জমি তলিয়ে গেছে। কৃষি অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী এ বছর হাওরের ৭ জেলায় মোট সাড়ে ৯ লাখ হেক্টর জমিতে হাওরের একমাত্র ফসল ইরি-বোরো ধান চাষ করা হয়। উৎপাদনের লমাত্রা নির্ধারণ করা হয় প্রায় ৩০ লাখ মেট্রিক টন চাল। বর্তমান বাজার দরে যার মূল্য প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা। টাকার অংকে যে তি হয়েছে তা ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এছাড়া পানির নিচে কাঁচা ধান পচে নানাবিধ দূষণের সৃষ্টি হয়েছে। এতে হাওরের বিভিন্ন এলাকায় ইতিমধ্যে কয়েক হাজার মেট্রিক টন মাছ মরে গেছে। কাঁকড়া, ব্যাঙসহ অন্যান্য জলজ প্রাণীর মৃত্যুর কোনো হিসাব সরকারি বা বেসরকারি পাওয়া যায়নি। একই সাথে জলজ প্রাকৃতিক পরিবেশও হুমকির মুখে পড়েছে।

কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী উপজেলার হাওরসহ পুরো হাওরাঞ্চলের প্রায় ৯৫ শতাংশ ফসল তলিয়ে যাওয়ায় খাদ্যশস্যের পাশাপাশি পশুখাদ্যেরও শূন্যতা দেখা দিয়েছে।

এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত নিকলীসহ পুরো হাওর অঞ্চলকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। এ উপলক্ষে ঢাকাস্থ নিকলী সমিতি আয়োজিত মানববন্ধনে সুনির্দিষ্ট কিছু দাবি উপস্থাপন করা হয় :

১. সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সব ধরনের কৃষিঋণ মওকুফ করতে হবে।
২. আগামী ফসল উঠা পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক পরিবারকে প্রতিমাসে অন্তত ৪০ কেজি চাল ও ৫০০০/- টাকা করে নিয়মিত প্রদান করতে হবে।
৩. ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে পরবর্তী মৌসুমে বীজ, সার, কীটনাশকসহ কৃষি উপকরণ বিনামূল্যে সরবরাহ করতে হবে।
৪. আগামী মৌসুম পর্যন্ত হাওরাঞ্চলে সরকার নির্ধারিত মূল্যে প্রয়োজন অনুযায়ী চাল, আটা, তেল, ডাল, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী সরবরাহ করতে হবে।
৫. সরকারি-বেসরকারি সকল সহযোগিতা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে পৌছানো নিশ্চিত করতে হবে।
৬. অকাল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সাময়িক অর্থনৈতিক সুবিধাদানে মৌসুমী মৎস্যজীবীদের জন্য হাওরের জলাশয় উন্মুক্ত করতে হবে।
৭. হাওরের ইরি-বোরো ধান অকাল বন্যার হাত থেকে রক্ষায় বাঁধ নির্মাণ করতে হবে।
৮. বন্যার হাত থেকে রক্ষার জন্য স্থায়ীভাবে নদী-নালা, খাল-বিল খনন করতে হবে।
৯. বাঁধ নির্মাণে জড়িত কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের দুর্নীতি তদন্তসাপেক্ষে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
১০. হাওরাঞ্চলে বেকার জনগোষ্ঠীর জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত অর্থনৈতিক জোন স্থাপন করতে হবে।
১১. হাওর বিষয়ক পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন করতে হবে।
১২. হাওর ও জলাশয় উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান কার্যালয় হাওরাঞ্চলেই স্থাপন করতে হবে।
১৩. উন্নত দেশগুলোর মতো কৃষক ও কৃষিকে বাঁচিয়ে রাখতে কৃষিবীমার ব্যবস্থা করতে হবে।

Similar Posts

error: Content is protected !!