বিশেষ প্রতিনিধি ।।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের পূর্ব সোনারামপুরের কথিত মানব পাচারকারীচক্রের মূল হোতা আবু তৈয়ব কাজলের বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার ১৮ মে কিশোরগঞ্জের নিকলীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে ভুক্তভোগী ও সহস্রাধিক এলাকাবাসী। উপজেলার জারইতলা ইউনিয়নের গোপী রায়ের বাজারে কাজলের প্রতারণা ও নির্যাতনের শিকার কিশোরগঞ্জবাসী ব্যানারে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে নিকলী, বাজিতপুর ও কুলিয়ারচর উপজেলার ক্ষতিগ্রস্তসহ এলাকাবাসী অংশ নেন।
মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল করে সংক্ষিপ্ত পথসভায় কাজলের প্রতারণার শিকার কফিলউদ্দিন, রুসমত আলী, রাজন কুমার সরকার, আশুগঞ্জের আড়াইসিধার মিলন মিয়া, কুলিয়ারচরের এবাদুল হক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। বক্তারা কাজলকে গ্রেফতারের পাশাপাশি তার চক্রের অপর সদস্যদের গ্রেফতার ও মানুষের পাওনা টাকা ফেরত দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
তার প্রলোভনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কিশোরগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার অগণিত মানুষ নিঃস্ব হয়ে একেবারে পথে বসেছেন। চিহ্নিত এ প্রতারকের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার পূর্ব সোনারামপুর গ্রামে। তিনি মৃত জয়ধর আলীর ছেলে।
সরেজমিন এলাকায় গিয়ে জানা গেছে, বৈধ এবং কাজের কথা বললেও কাজল মূলত লোক পাঠাতো ভ্রমণ ভিসায়। একটি বিশেষ ই-মেইল atayab3@gmail.com. মাধ্যমে কাজল বহু জাল ভিসা সরবরাহ করেছেন বলেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।
জানা যায়, আশুগঞ্জের আড়াইসিধার মিলন, কাউসার, কামাল, চরচারতলার বাবুল, মোস্তফা, তালশহরের মোস্তফা কামাল, বাঞ্ছারামপুরের আব্দুর রব, চট্টগ্রামের মহেশখালীর কবির, চট্টগ্রামের ফরমান, যশোরের তুষার, হায়দার, মিলন, হামজা, বাবু, বগুড়ার সোহাগ, রাজশাহীর গোদাগারির হাসনাবাদের কাশেম, নোয়াখালীর লক্ষীপুরের দেলোয়ার, মুন্সীগঞ্জের উসমান, বিক্রমপুরের শিহাব, ঢাকার কেরানীগঞ্জের রাকিব, ঝিনাইদহের হিরন ও আসাদ, পাবনার ঈশ্বরদীর রাসেলসহ অগণিত প্রতারিত যুবক কাজলের ভয়াবহ প্রতারণার ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন। জেলার কুলিয়ারচর উপজেলার এবাদুল হক, চন্দন মিয়া, সবুজ মিয়া ও মিলন মিয়া কাজলের মাধ্যমে সোমালিল্যান্ডে গিয়ে টানা তিন মাস অনাহারে অর্ধাহারে থেকে কাটান। এমনকি লতাপাতা খেয়ে প্রাণ বাঁচাতে হয়েছে বলে তারা জানান। পরে দেশ থেকে টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছে।
প্রতারণার শিকার মিলন জানান, তিনি, তার এলাকার প্রতারিত কাউসার ও মোস্তফা সম্প্রতি আশুগঞ্জ থানায় অভিযোগ করেন। পুলিশ অভিযোগ আমলে নেয়নি। পরে উপজেলার আড়াইসিধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সেলিম মিয়ার মাধ্যমে সালিস বসিয়ে মাথাপিছু ৫০ হাজার টাকা করে আদায় করেন। আড়াসিধার চেয়ারম্যান মো. সেলিম মিয়া এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন।
কুলিয়ারচরের লক্ষীপুর নামাপাড়ার কবির হোসেন জানান, তার এলাকার পাঁচজনের সাথে কাজলের বিদেশে পাঠানোর ‘চুক্তি’ হয়। সে অনুযায়ী কাজল তার মাধ্যমে সাড়ে ১৩ লাখ টাকা নেন। কিন্তু বিদেশে পাঠানো তিনজনই কয়েক মাস পর দেশে ফিরতে বাধ্য হন।।
প্রতারক কাজলের মোবাইল ফোনে (০১৯৭১-৫২০৯০৪) বারবার কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। এমনকি তার সোমালিল্যান্ডে ব্যবহৃত ফোনেও (+২৫২২৮০৪৯৬৬) কথা বলার চেষ্টা করা হয়। সেটিও বন্ধ পাওয়া গেছে। এছাড়া কাজলের স্ত্রী আইরিন আক্তারের মোবাইল ফোনও (০১৯৫৫-৮৬৩৩১০) বন্ধ রয়েছে। কাজলের ইমো অ্যাকাউন্টটিও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। যে কারণে ভয়াবহ প্রতারণার অভিযোগের বিষয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বদরুল আলম তালুকদার জানান, তিনি দুদিন আগে আশুগঞ্জ থানায় যোগদান করায় প্রতারক আবু তৈয়ব কাজলের সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য জানেন না। কাজলের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ থেকে থাকলে তার সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।