হাওরে উড়াল সড়ক নির্মাণের প্রস্তাব

রাজীব আহাম্মদ ।।

হাওরে বন্যার কারণ অপরিকল্পিত উন্নয়ন। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করতে হাওরে প্রচলিত পদ্ধতিতে যেসব সড়ক নির্মাণ করা হয়েছিল, সেগুলোই হয়ে দাঁড়িয়েছে বন্যার কারণ। হাওর উন্নয়নের মহাপরিকল্পনাকে উপেক্ষা করে নির্মাণ করা এসব সড়কের কারণে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানি নামতে পারছে না। দেখা দিচ্ছে বন্যা, স্থায়ী জলাবদ্ধতা।

তাই বন্যা মোকাবেলার মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী ‘সাবমার্সিবল সড়ক’ (পানিতে ডুবে যাওয়া সড়ক) অথবা উড়াল সড়ক নির্মাণের প্রস্তাব করেছে হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তর। গত ৪ মে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মজিবুর রহমান জানিয়েছেন, হাওরের বন্যা নিরসন ও মোকাবেলায় তারা প্রস্তাবটি সড়ক ও সেতু নির্মাণকারী দুই মন্ত্রণালয়কে দিয়েছেন।

২০১৫ সালের মে মাসে ‘হাওর উন্নয়ন বোর্ডকে হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তর’-এ উন্নীত করা হয়। এর আগে ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে হাওর উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা নেওয়া হয়। মহাপরিকল্পনায় হাওর এলাকায় ‘সাবমার্সিবল’ সড়ক নির্মাণের সুপারিশ করা হয়। এ সড়ক শুষ্ক মৌসুমে যানচলাচল উপযোগী থাকে। বর্ষায় পানির নিচে তলিয়ে যায়। এতে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানি নিষ্কাশনে বাধা সৃষ্টি হয় না। বর্ষায় দীর্ঘ সময় তলিয়ে থাকলেও সড়কের কোনো ক্ষতি হয় না। পানির নিচে থাকায় নৌ চলাচলেও বাধা সৃষ্টি করে না। এ ছাড়া পানি নিষ্কাশনের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রেখে উড়াল সড়ক নির্মাণ করা হলে জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।

মহাপরিকল্পনায় সাবমার্সিবল সড়ক নির্মাণের সুপারিশ থাকলেও হাওরে কেন সাধারণ সড়ক নির্মাণ করা হয়- এ বিষয়ে হাওর উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক মহাপরিচালক মুহাম্মদ ইনামুল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাবমার্সিবল সড়ক কিংবা উড়াল সড়ক নির্মাণ ব্যয়বহুল। এ কারণে সাধারণ সড়ক নির্মাণ করেছিল বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থা। মূল উঁচু সড়কগুলো সাবমার্সিবল না হলেও সমস্যা নেই, যদি তার নিচ দিয়ে পানি নিষ্কাশনের মতো পর্যাপ্ত জায়গা থাকে। তবে গ্রামীণ সড়ক ও সংযোগ সড়কগুলো সাবমার্সিবল করে নির্মাণ করা উচিত। যার ওপর দিয়ে ঢলের ও বৃষ্টির পানি নিষ্কাশিত হতে পারবে।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে বলা হয়, হাওরের বিশেষ পরিবেশ ও প্রতিবেশের কারণে মহাপরিকল্পনায় ‘সাবমার্সিবল’ সড়ক নির্মাণের সুপারিশ করা হয়। কিন্তু এর পরিবর্তে কোনো কোনো এলাকায় সারা বছরে চলাচল উপযোগী সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে এবং এ ধরনের আরো কিছু সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ ধরনের সড়ক নির্মাণ করা হলে হাওর এলাকার বিশাল উন্মুক্ত জলাভূমির পানি নিষ্কাশন মারাত্মকভাবে বাধার সম্মুখীন হবে।

সমতল ভূমির মতো হাওর এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হলে, এ অঞ্চলের কৃষি ও মৎস্য সম্পদের মারাত্মক ক্ষতিকর প্রতিবেশ ও পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে। বর্তমানে হাওরের পানি উন্মুক্ত থাকায় একটি নির্ধারিত সময়ে নিষ্কাশিত হয় এবং হাওর এলাকায় একমাত্র বোরো ফসল আবাদ করা সম্ভব হয়। এ ছাড়া পানি চলাচল উন্মুক্ত থাকায় মাছের উৎপাদন ও প্রজনন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সূত্র : হাওরে উড়াল সড়ক নির্মাণের প্রস্তাব (সমকাল, ২২ মে ২০১৭)

Similar Posts

error: Content is protected !!