আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
‘চলতি ২০১৭ সালে বাংলাদেশের প্রধান তিনটি নদী যমুনা, গঙ্গা ও পদ্মার তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকার মোট ৩ হাজার ২২২ হেক্টর জমি ভাঙ্গন কবলিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।’
বুধবার ২৪ মে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ২০১৭ সালের নদীভাঙ্গন বিষয়ক ভবিষ্যদ্বাণী সংক্রান্ত প্রচারণামূলক এক সেমিনারে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা এই তথ্য তুলে ধরেছেন।
পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বলেছেন, বর্তমান সরকার নদীভাঙন নিয়ন্ত্রণে আন্তরিকভাবে কাজ করছে। নদীভাঙনের পূর্বাভাস পেলে তা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে পূর্ব প্রস্তুতি নেয়া যায়। বাসস
সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট এন্ড জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস) নদীর গতি-প্রকৃতি ও ভাঙনের পূর্বাভাস নিয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করছে এবং এজন্য তাদের প্রশংসা করে পানিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, এই পূর্বাভাস অনুযায়ী আমাদেরকে যথোপযুক্ত ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সেন্টার ফর এভায়রনমেন্ট এন্ড জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস)-এর উদ্যোগে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সহযোগিতায় এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় অতিথি হিসেবে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বীর প্রতীক এমপি উপস্থিত ছিলেন।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহম্মদ খান, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর কবীর বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
সিইজিআইএস-এর নির্বাহী পরিচালক প্রকৌশলী মো. ওয়াজিউল্যাহ উদ্বোধনী সেশনে সভাপতিত্ব করেন। এসময় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ইমেরিটাস ড. আইনুন নিশাত উপস্থিত ছিলেন।
পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, নদীভাঙন মানুষের জীবনে এক কঠিন নিয়তি, বাধ্য হয়েই মানুষকে তা মেনে নিতে হয়। নদীভাঙনের কারণে মানুষের ঘর-বাড়ি স্থানান্তরিত হয়।
ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা হলে বিশ্ব জানে। ঝড়-বন্যা হলে সরকার নড়েচড়ে বসে। কিন্তু নদীভাঙন হলে তাৎক্ষণিকভাবে তেমন কিছু দেখা যায় না।
তিনি বলেন, নদীভাঙনের ফলে জীবনহানি না হলেও জমি ও ফসলহানি হয়। এর মাধ্যমে আসলে আমরা ভবিষ্যত হারাই। যে ব্যক্তি বা পরিবার নদীভাঙনের শিকার হয়, তারা সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েন। নদী সিকস্তির শিকারদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ক্ষতিপূরণ কখনই পূরণ করা সম্ভব নয়।
সরকার নদীভাঙন রোধে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে জানিয়ে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, কিন্তু এ বিষয়ে কাজ করার জন্য আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তিনি নদীর সামগ্রিক পানি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়ে বলেন, জ্বালানী খাতে যেভাবে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ছে, তেমনি পানি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও সহযোগিতা জোরদার করতে হবে।
সেমিনারে ২০১৭ সালে বাংলাদেশের প্রধান তিনটি নদী; যমুনা, গঙ্গা ও পদ্মার তীরবর্তী ঝুঁকিপূর্ণ স্থান ও স্থাপনাসমূহ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করা হয়।
এতে যমুনা নদী সম্পর্কে বলা হয়েছে, যমুনার তীরবর্তী ১ হাজার ২০৫ হেক্টর জমি, ১৭৬ হেক্টর বসত-ভিটা, ২ হাজার ৪৭০ মিটার ব্যবহার্য এবং ৩৬২ মিটার অব্যবহার্য বেড়ি-বাধ, ২৩৫ মিটার জেলা সড়ক, ২২৭ মিটার উপজেলা সড়ক, ২ হাজার ৩৯৩ মিটার গ্রামীণ সড়ক, ১৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৫টি হাট-বাজার, ১টি সরকারি ও ১টি বেসরকারি অফিস, ১টি স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং ২১টি মসজিদ ও মন্দির ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে রয়েছে।
অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়েছে, গঙ্গার তীরবর্তী ৩৮৬ হেক্টর জমি, ৪৫ হেক্টর বসত-ভিটা, ২৪৭ মিটার উপজেলা সড়ক, ৫০১ মিটার গ্রামীণ সড়ক, ৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ১টি হাট-বাজার, ১টি স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং ৩টি মসজিদ ও মন্দির ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে রয়েছে।
অপরদিকে পদ্মার তীরবর্তী ১ হাজার ৬৩১ হেক্টর জমি, ৩৬২ হেক্টর বসত-ভিটা, ৯০৬ মিটার গ্রামীণ সড়ক, ২টি হাট-বাজার, ১টি মসজিদ বা মন্দির ভাঙ্গনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
যমুনা, গঙ্গা ও পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকায় মোট ৩ হাজার ২২২ হেক্টর জমি, ৩৬২ হেক্টর বসত-ভিটা, ২ হাজার ৪৭০ মিটার কার্যকর এবং ৩৬২ মিটার অকার্যকর বেড়ি-বাধ ভাঙ্গন কবলিত হতে পারে।
এছাড়া সেমিনারে এই তিনটি নদীতে ২৩৫ মিটার জেলা সড়ক, ৪৭৪ মিটার উপজেলা সড়ক, ৩ হাজার ৮০০ মিটার গ্রামীণ সড়ক, ২১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৮টি হাট-বাজার, ১টি সরকারি ও ১টি বেসরকারি অফিস, ২টি স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং ২৫টি মসজিদ ও মন্দির ভাঙ্গন কবলিত হতে পারে বলে তথ্য উপস্থাপন করা হয়।
আধুনিক প্রযুক্তির রিমোট সেন্সিংইমেজ ব্যবহারের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এ ভবিষ্যদ্বাণী করায় বাস্তবিকতার সাথে এর যথেষ্ট মিল পাওয়া যায় বলে সেমিনারে উল্লেখ করা হয়। এতে আরও জানানো হয়, ২০১৬ সালের ভবিষ্যদ্বাণীর সাথে সংগঠিত ক্ষয়-ক্ষতির যথেষ্ট মিল ছিল।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ ও পেশাদার ব্যক্তিবর্গ সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।