আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের এক ধূমকেতু মাহবুব আলম। নৌবাহিনীর অ্যাথলেট ছিলেন তিনি। ১৯৯৫ সালে বলা নেই কওয়া নেই ঝড়ের বেগে ২০০ মিটার স্প্রিন্টে মাদ্রাজ (চেন্নাই) সাফে সোনা জিতে ফেললেন মাহবুব। ১৯৯৯ সালে কাঠমান্ডু সাফে ২০০ মিটার স্প্রিন্টে তার সোনা হাতছাড়া হয় ফটো ফিনিশে।
বর্তমান প্রজন্ম প্রায় ভুলতেই বসেছে তাকে। কিন্তু এমনটা হওয়ার কথা ছিলো না। মাহবুব আলম ছিলেন বাংলাদেশের ইতিহাসসেরা অ্যাথলেট। বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য, সড়ক দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছিল এই কীর্তিমান অ্যাথলেটকে। ২০১০ সালের ৪ ডিসেম্বর কাঁচপুর ব্রিজের কাছে অনিরাপদ সড়কের ফাঁদে পড়ে মাত্র ৩৭ বছর বয়সে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন মাহবুব।
কুমিল্লা থেকে মাইক্রোবাসে করে ঢাকা ফেরার পথে কাঁচপুরের কাছে ট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় সেই মাইক্রোবাসের। অন্য আরোহীরা প্রাণে বেঁচে গেলেও মাহবুবের মৃত্যু হয়েছিল স্পটেই। তার এই মৃত্যুর সাথে সাথে বিপর্যয়ে পড়ে পরিবারও। ভালো নেই কীর্তিমান এই অ্যাথলেটের পরিবার।
১৯৯৫ সালে মাদ্রাজ সাফ গেমসে দেশের একমাত্র অ্যাথলেট হিসেবে ২০০ মিটার স্প্রিন্টে স্বর্ণপদক অর্জন করে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছিলেন তিনি। ১৯৯৯ সালে কাঠমান্ডু সাফ গেমসে ফটোফিনিশিংয়ে ২০০ মিটারেই রূপাজয়ী এবং দেশে ১০০ ও ২০০ মিটারে অপ্রতিদ্বন্দ্বী মাহবুব অ্যাথলেটিকসে সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০৩ সালে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারে ভূষিত হন।
কিশোরগঞ্জ জেলা সদরের হারুয়া এলাকার মুক্তিযোদ্ধা মরহুম কালু মিয়া ও হালিমা খাতুনের ছেলে মাহবুব আলম ছিলেন দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সবার বড়। মাহবুব পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম হওয়ায় তার অকাল প্রয়াণে শিশুকন্যা শারজানা আলম মীমকে নিয়ে নিদারুণ সঙ্কটে নিপতিত হন স্ত্রী স্বপ্না আক্তার। শুরু হয় অনটন আর কষ্টের অনিশ্চিত জীবন। মাহবুব দেশকে অনেক দিয়েছেন, বেঁচে থাকলে নিঃসন্দেহে আরো দিতেন। কিন্তু প্রতিদানে কি পেয়েছেন মাহবুবের পরিবার? একমাত্র কন্যাসন্তান মীমকে নিয়ে অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে হাঁটছেন তার স্ত্রী স্বপ্না আক্তার। আর্থিক কষ্টের সাথে মানসিক বেদনায় ভেঙ্গে পড়েছেন তিনি। সন্তানকে স্বামীর আদর্শে মানুষ করার স্বপ্ন ক্রমশই বিবর্ণ হয়ে আসছে।
সূত্র : ভালো নেই অ্যাথলেট মাহবুবের পরিবার (কিশোরগঞ্জ নিউজ, ৩ জুন ২০১৭)