আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
ভ্রমণ ও পর্যটনের জন্য কোন দেশ ভালো, কোনটির অবস্থান বাজে, তা নিয়ে প্রতিবছরই প্রতিবেদন প্রকাশ করে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম’ (ডব্লিউইএফ)। এক দশক ধরে সংস্থাটি এই প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছর ১৩৬টি দেশের ওপর প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে ২০টি দেশকে পর্যটকদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ‘ট্র্যাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কমপিটিটিভনেস রিপোর্ট’ শিরোনামের প্রতিবেদনে ঝুঁকিপূর্ণ সেই ২০ দেশের তালিকায় আছে বাংলাদেশও।
প্রতিবেদনে তালিকায় থাকা দেশগুলোর বিভিন্ন সামাজিক বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।
১. কলম্বিয়া
একসময়ের বিপজ্জনক কলম্বিয়ার অবস্থা আগের চেয়ে ভালো হলেও এখনো পর্যটকদের জন্য যথেষ্ট ভীতি রয়েছে। সশস্ত্র বিভিন্ন সংগঠনের সক্রিয় তৎপরতা, অপহরণ, মাদক পাচার ও ডাকাতির মতো বিষয়গুলোর দেশটি এখনো পর্যটকদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এ ছাড়া বোগোতার মতো বড় শহরে বিস্ফোরণ ও সন্ত্রাসবাদের মতো ঘটনাগুলোও পর্যটকদের জন্য হুমকিস্বরূপ।
২. ইয়েমেন
ইয়েমেনের রাজধানী সানায় বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে আটক করে যাচ্ছে। আল-কায়েদার মতো চরমপন্থী সংগঠন সেখানে সক্রিয়। এ ছাড়া ল্যান্ড মাইন (মাটির নিচে লুকানো বোমা) এবং বিমান হামলায় বিধ্বস্ত দেশটিতে খাবার, পানি, চিকিৎসা সহায়তাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। তাই এটি পর্যটকদের জন্য সুখকর কোনো অভিজ্ঞতা দেবে না।
৩. এল সালভাদর
মধ্য আমেরিকার দেশ এল সালভাদর খুনোখুনির জন্য কুখ্যাত। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি হত্যা হয় দেশটিতে। এ ছাড়া দেশটিতে মারাস নামে সশস্ত্র একটি সংগঠন রয়েছে যারা সহিংসতা, অস্ত্র চোরাচালান ও মাদক পাচারে যুক্ত।
৪. পাকিস্তান
কয়েক বছর ধরে পাকিস্তানে ধর্মের নামে সহিংসতা নিত্যকার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশটির সরকার মোটা দাগে বাকস্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে। শুধু তাই নয়, অনেক জায়গায় বিদেশিদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
৫. নাইজেরিয়া
বোকো হারাম এবং পশ্চিম আফিকায় সক্রিয় আইএসের মতো চরমপন্থী দল নাইজেরিয়ায় সহিংসতার জন্য দায়ী। তাদের আক্রমণের প্রধান লক্ষ্য থাকে গির্জা, স্কুল, রেস্তোরাঁ, আবাসিক হোটেল এবং বিনোদন কেন্দ্রগুলো।
নাইজেরিয়ায় ভ্রমণের ওপর পর্যটকদের সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘ঘনবসতিপূর্ণ স্থানে যাওয়ার সময় সবার সতর্ক থাকা উচিত।’
৬. ভেনিজুয়েলা
পানি, খাদ্য, ওষুধ ও বিদ্যুতের ঘাটতি থাকা দেশটিতে সামাজিক অস্থিরতা ও অপরাধ বাড়ছে। বিশ্বের অন্যতম অপরাধপ্রবণ একটি দেশ ভেনিজুয়েলা। ডাকাতি, খুন, অপহরণ ও গাড়ি ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা খুবই সাধারণ। তাই দেশটিতে ভ্রমণে সতর্কতা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট।
৭. মিসর
আইএস ও অন্য চরমপন্থী সংগঠনগুলো মিসরের বিভিন্ন পাবলিক প্লেসসহ পর্যটন এলাকাগুলোতে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। পরিবহন খাতকেও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে এসব সংগঠন। এর ফলে ভঙ্গুর হয়ে গেছে দেশটির পর্যটন খাত।
৮. কেনিয়া
রাজধানী নাইরোবির বাইরে অনেক সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। রাজধানীতেও সন্ত্রাসী হামলার হুমকি এখনো বিরাজ করছে। গ্রেনেড, গুলি ও ছুরিকাঘাতের মাধ্যমে আক্রমণ দেশটির নিত্যচিত্র।
৯. হুন্ডুরাস
বিশ্বের সর্বোচ্চ হত্যার হার এই দেশে। পুলিশ বা সামরিক বাহিনীর সদস্যসংখ্যা কম হওয়ায় দেশটিতে এখানে অপরাধ বাড়ছে। টেগুসিগালপা, সান পেড্রো সুলা এবং লা সিবা বিপজ্জনক এলাকা। গত সাত বছরে এসব এলাকায় যেসব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, তার ৭০ ভাগই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।
১০. ইউক্রেন
দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে রাশিয়া-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সংঘর্ষের চিত্র নিত্যকার। দেশটিতে প্রায়ই এই সংঘাতের বলি হচ্ছে বেসামরিক নাগরিকরা।
১১. ফিলিপাইন
রাজধানী ম্যানিলার ক্যাসিনোতে গোলাগুলি এবং অগ্নিকাণ্ড ছাড়াও সুলু দ্বীপপুঞ্জ এবং দক্ষিণ সলুসাগরজুড়ে অপহরণ সাধারণ ঘটনা। পর্যটকরা অপহরণের প্রধান লক্ষ্যবস্তু।
১২. লেবানন
বেশ কিছু চরমপন্থী সংগঠন সক্রিয় থাকায় বোমা বিস্ফোরণের মতো সন্ত্রাসী হামলা প্রতিনিয়তই ঘটছে। প্রতিবেশী কিংবা পরিবারের মধ্যে ছোট বিরোধের জের ধরে হিংসাত্মক হয়ে ওঠে স্থানীয় কিছু সংগঠন।
১৩. মালি
মালির রাজধানী বামাকোতে পর্যটকদের ওপর হামলার ঝুঁকি বেশি। হোটেল ও রেস্তোরাঁয় পর্যটকদের লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়। ২০১৫ সালের নভেম্বরে বামাকোর র্যাডিসন হোটেলে অনেক লোককে জিম্মি করে হত্যা করা হয়।
১৪. বাংলাদেশ
সন্ত্রাসী হামলার হুমকির পাশাপাশি, প্রতিকূল আবহাওয়া বাংলাদেশকে পর্যটকদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। এ ছাড়া দেশটিতে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ লেগে আছে।
১৫. শাদ
আইএস, আল-কায়েদা ও বোকো হারাম দেশটিতে সক্রিয়। বেসামরিক নাগরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি বিদেশিরাও এদের হামলার শিকার। লিবিয়া, সুদান ও শাদের সীমান্তবর্তী এলাকায় মাইন (মটির নিচে থাকা বোমা) থাকায় পারাপার বিপজ্জনক।
১৬. গুয়াতেমালা
মেক্সিকোসংলগ্ন গুয়াতেমালা সীমান্ত দেশটির সবচেয়ে বিপজ্জনক অংশ। সেখানে ঘন ঘন মাদক ও ভিনদেশি লোকজনকে পাচার করা হয়। এ ছাড়া গাড়ি ছিনতাই, ডাকাতি, চুরি নিয়মিত ঘটনা।
১৭. দক্ষিণ আফ্রিকা
দক্ষিণ আফ্রিকার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির কারণে অনেক লোকজন ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মী ভাড়া করতে বাধ্য হচ্ছেন। প্রত্যন্ত মফস্বল ও বস্তিগুলোতে প্রতিনিয়তই নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়।
১৮. জ্যামাইকা
বর্তমানে দেশটিতে ভ্রমণের কোনো পরামর্শ নেই। কিংস্টন এবং মন্টেগো বের মতো কিছু শহরে ব্যাপক হারে অপরাধ বাড়ছে। এমনকি পর্যটকরাও এসব হামলায় আক্রান্ত হতে পারে।
১৯. থাইল্যান্ড
থাইল্যান্ডে চারটি প্রদেশ সবচেয়ে বিপজ্জনক। বিগত ১৩ বছরে এসব স্থানে সহিংসতায় সাড়ে ছয় হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
২০. গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র
দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর কিছু অংশ, অন্য সশস্ত্র সংগঠন ও ডাকাতদলগুলো বিভিন্ন প্রান্তে সক্রিয়। তারা প্রায়ই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পর্যটকরা এসব সশস্ত্র সংঘাতের বলি হতে পারে।
সূত্র : পর্যটকদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ২০ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ [এনটিভি অনলাইন, ৯ জুন ২০১৭]