আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
করিমগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে দুই কিলোমিটার দূরে রামনগর গ্রাম। সেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের সতীদাহ প্রথার স্মৃতিচিহ্ন কালের নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে জ্ঞানদাসুন্দরী সহমরণ মঠ।
কোনো ধরনের সংরক্ষণের উদ্যোগ না থাকায় জীর্ণপ্রায় মঠটি যে কোনো সময় ধসে পড়তে পারে। দীর্ঘদিনের অযত্ন-অবহেলা এবং একশ্রেণীর লোভী মানুষ কর্তৃক মঠটির গোড়া থেকে মাটি কেটে ও ইট খুলে নেয়ার ফলে মঠটির অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। ইতিমধ্যে মঠটি একদিকে কিছুটা হেলে পড়েছে। ফলে যে কোনো সময় মঠটি ধসে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
ইতিহাস ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই মঠটি এখনও এক সময় রক্ষণশীল হিন্দু সমাজের সতীদাহ প্রথার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এটিই ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষাপ্রাপ্ত সতীদাহ প্রথার স্মৃতিবিজড়িত জেলার একমাত্র স্মৃতিস্তম্ভ।
বৃটিশ আমলে লর্ড বেন্টিকের সময় (১৮২৯ খ্রী:) তৎকালীন ভারতবর্ষে সতীদাহ প্রথাকে আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়। এর আগে পর্যন্ত স্ত্রীর আগে স্বামীর মৃত্যু হলে স্বামীর জ্বলন্ত চিতায় ঝাঁপ দিয়ে স্ত্রীকেও সহমরণে যেতে হত।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জোর-জবরদস্তি করে, আফিমজাতীয় নেশাদ্রব্য সেবন করিয়ে এবং হাত-পা বেঁধে স্ত্রীকেও মৃত স্বামীর চিতায় উঠতে বাধ্য করা হত। বাংলা ১২২৪ সালের ২৬ বৈশাখ গুজাদিয়ার বিখ্যাত তালুকদার বাড়ির একজন বিশিষ্ট কর্মচারির মৃত্যু হলে তার স্ত্রী জ্ঞানদাসুন্দরী স্বামীর সাথে একই চিতায় সহমৃতা হয়েছিলেন।
তখন ইংরেজ সরকার ও সমাজসেবীদের সহায়তায় চলছিল সতীদাহ প্রতিরোধের চেষ্টা। জ্ঞানদাসুন্দরীর সহমরণের ঘটনায় চারিদিকে হৈ-চৈ পড়ে যায়। পক্ষে-বিপক্ষে সমাজপতিদের মাঝে তর্কের ঝড় ওঠে।
এক পক্ষ দাবি করে, জ্ঞানদাসুন্দরী স্বেচ্ছায় সহমরণ গ্রহণ করেছেন। অপর পক্ষ অভিযোগ তুলে, তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে সহমরণে বাধ্য করা হয়েছে। বিষয়টি তখন আদালত পর্যন্ত গড়ায় এবং আদালতের রায়ে জোরপূর্বক সহমরণে বাধ্য করায় জ্ঞানদাসুন্দরীর পুত্র গয়ারাম চক্রবর্তীর ছয় মাসের জেল হয়।
গয়ারাম চক্রবর্তী পরে তার সহমৃতা মায়ের স্মৃতি রক্ষার্থে চিতা স্থানে তৈরি করেছিলেন একটি মঠ। যেটি জ্ঞানদাসুন্দরী সহমরণ মঠ হিসেবে আজো এলাকাবাসীদের কাছে পরিচিত। কিন্তু কালের করালগ্রাসে সেটির অস্তিত্ব আজ বিলুপ্ত হতে চলেছে।
সূত্র : ধস ঝুঁকিতে জ্ঞানদাসুন্দরী সহমরণ মঠ [কিশোরগঞ্জ নিউজ, ১৫ জুন ২০১৭]