আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
সাধারণ বিশ্বাস অনুসারে, এই সংখ্যা ঐশী তাৎপর্যপূর্ণ। এর দ্বারা এক মহান বাণীকে ব্যক্ত করা হয়। কিন্তু কীভাবে একটি সংখ্যা হয়ে উঠতে পারে এই মহান বাণীর প্রতীক?
ভারত তো বটেই, পাকিস্তান, বাংলাদেশ-সহ দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশেই ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে ৭৮৬ সংখ্যাটিকে বিশেষ গুরুত্ব প্রদানের একটা প্রবণতা রয়েছে। অসংখ্য মানুষ কোনো কিছু লেখার আগে ৭৮৬ লিখে তার পরে লিখন শুরু করেন। মুসলিম ব্যবসায়ীরাও তাদের বিপণির সাইনবোর্ডে এই সংখ্যাটিকে লিখে রাখেন। সাধারণ বিশ্বাস অনুসারে, এই সংখ্যা ঐশী তাৎপর্যপূর্ণ। এর দ্বারা পবিত্র কোরানের সার-বক্তব্য ‘বিসমিল্লাহ্ আল-রাহমান আল-রহিম’-কে ব্যক্ত করা হয়।
কিন্তু কীভাবে প্রযুক্ত হয় এই ব্যাখ্যা? কীভাবে একটি সংখ্যা হয়ে উঠতে পারে এই মহান বাণীর প্রতীক?
উত্তরে ভাষা-ইতিহাসের বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, আরবি অক্ষরমালা দু’ভাবে সাজানো যেতে পারে। প্রথমটি চিরাচরিত বর্ণানুক্রমিক ধারা। আর দ্বিতীয়টি আবজাদ পদ্ধতি, যাতে প্রতিটি অক্ষরের গাণিতিক মান অনুসারে তাদের ক্রমবিন্যাস করা হয়। এই পদ্ধতি অনুসারে প্রতিটি অক্ষরের নিজস্ব গাণিতিক মান রয়েছে এবং তা ১ থেকে ১০০০ পর্যন্ত। আবজিদ পদ্ধতি অনুসৃত হয় ফিনিশীয়, আরামাইক, হিব্রু ইত্যাদি সেমিটিক ভাষাতেও।
ভারতীয় উপমহাদেশে বাসরত ইসলাম বিশ্বাসীদের কাছে আবজিদ পদ্ধতি বিশেষ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এই পদ্ধতিতে ‘বিসমিল্লাহ্’ শব্দটির গাণিতিক মান নির্ণিত হয় ৭৮৬। তাই এই উপমহাদেশের মুসলমানরা ‘বিসমিল্লাহ্’ বা ‘আল্লাহ্’-র পরিবর্তে ৭৮৬ সংখ্যাটিকে লিখতে শুরু করেন। যে কোনো জায়গায় পরম শক্তির নাম লেখা উচিত নয়— এই বোধ থেকেই শুরু হয় সংখ্যা দিয়ে তাঁকে বোঝানোর রীতি।
এই প্রথা শুরু হয়েছিল আব্বাসিদ খিলাফতের আমলে। এর সাথে মহানবী মহম্মদের (সাঃ) কোনো সম্পর্ক নেই। সেই কারণে অনেক পরম্পরাবাদী ইসলাম বিশ্বাসী এই সংখ্যাকে তেমন গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন না। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ায় ৭৮৬ এক অতি জনপ্রিয় কাল্ট। অসংখ্য অতিলৌকিক বিশ্বাস এই সংখ্যাকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে। এমনকী, বলিউড ছবিতেও এই সংখ্যার চমৎকারকে বার বার তুলে ধরা হয়েছে। এই সময়ে এই সংখ্যার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন মুসলমান বৃত্ত ছাড়িয়ে প্রবেশ করেছে অন্য ধর্মবিশ্বাসীদের আঙিনাতেও।
সূত্র : যে কারণে ৭৮৬ পবিত্র,এই সংখ্যার রহস্য জেনে নিন [দেশে বিদেশে, ১৭ জুন ২০১৭]