আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
পরিবারের উন্নতির আশায় ধারকর্জ করে সিঙ্গাপুর গিয়েছিলেন মোহাম্মদ আশাদুল ইসলাম। ভালোই কাটছিল। কিন্তু হঠাৎই চাকুরি হারালেন। এখন দেশে ফিরতে হয়েছে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে। তাঁর মতো অবস্থা আরো অনেকের।
বাংলাদেশিদের গল্পগুলো অনেকটা একইরকম। শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে যাঁরা বিভিন্ন দেশে যান, তাঁরা অনেকেই দেশে ধারকর্য করে বিদেশে যাওয়ার টাকা সংগ্রহ করেন। কথা থাকে বিদেশে গিয়ে ক্রমান্বয়ে সেই টাকা শোধ করবেন। অনেকে সফল হন, কিন্তু ব্যর্থতাও আছে।
হঠাৎ করে কাজ হারানো মোহাম্মদ আশাদুল ইসলামের অবস্থাটাও সেরকম। গত বছরের শুরুতে বিভিন্ন এজেন্সিকে ১২ হাজার মার্কিন ডলার দিয়ে কাজের নিশ্চয়তাসহ সিঙ্গাপুর গিয়েছিলেন তিনি। দিনপ্রতি ১৮ সিঙ্গাপুরী ডলারে কাজ করতেন সেখানে। নির্মাণ শ্রমিক ছিলেন তিনি। বাড়তি কাজ করলে পেতেন তিন সিঙ্গাপুরি ডলার। মাসে একদিন ছুটি, বাকি সবদিন কাজ। এভাবে কাজ করে মোটামুটি ভালোই আয় করেছেন তিনি। তবে এখনো ঋণ রয়ে গেছে ছয় হাজার সিঙ্গাপুরি ডলার।
আশাদুল ইসলামের চাকুরি চলে যায় গত ডিসেম্বরে। এরপর সিঙ্গাপুরি কর্তৃপক্ষ তাঁকে এক মাস সময় দিয়েছিল নতুন চাকুরি খুঁজতে। সেটা না পাওয়ায় ছয় হাজার সিঙ্গাপুরি ডলারের কর্জ মাথায় নিয়ে দেশে ফিরতে হয়েছে তাঁকে।
আশাদুলের মতো আরো অনেকের পরিস্থিতিই এমন। সিঙ্গাপুরে নিয়ম হচ্ছে, পদ খালি থাকলে সেখানে বিদেশি শ্রমিকদের নেয়া যায়। কিন্তু কোনো প্রতিষ্ঠানে যদি মন্দা দেখা দেয় এবং লোক ছাঁটাইয়ের প্রয়োজন পড়ে, তাহলে প্রথম ধাক্কাটা বিদেশি শ্রমিকদের ওপরই যায়। এমন এক পদ্ধতির কবলে পড়ে গত বছর অন্তত ৩০ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিকের সিঙ্গাপুর ছাড়তে হয়েছে বলে সিঙ্গাপুরের বাংলাদেশি দূতাবাস জানিয়েছে।
এখনও অবশ্য সেদেশে বাংলাদেশি শ্রমিকের সংখ্যা ১২০,০০০-এর মতো। যাঁরা আছেন, তাঁদের রঙিন স্বপ্নও টিকে আছে। অনেকের পরিকল্পনা হচ্ছে, টানা কয়েক বছর বিদেশে কাজ করার পর দেশে গিয়ে দোকান দেবেন, কিংবা ছোটখাট ব্যবসা বাণিজ্য করে আনন্দে জীবন কাটাবেন। কিন্তু যেভাবে সিঙ্গাপুরে চাকুরি হারাচ্ছেন বিদেশি শ্রমিকরা, তাতে তাঁদের এই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ পাবে তো?
সূত্র : ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে সিঙ্গাপুর থেকে ফিরছেন বাংলাদেশিরা [ডয়চে ভেলে, ২৩ জুন ২০১৭]