আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
মানুষের প্রতিদিনের একটি গতানুগতিক নির্ধারিত খাদ্য তালিকা থাকে। ঘুরেফিরে সপ্তাহের সাতদিন প্রায় একই পদের খাবার মানুষ গ্রহণ করে থাকে।
তবে এর মাঝেও কিছু মুখরোচক খাবার রয়েছে, যেগুলি রসনায় পানি এনে দেয়, খাবারের আগ্রহ বাড়িয়ে তোলে। এর একটি অন্যতম উপাদান হচ্ছে চ্যাপাসহ নানা জাতের শুঁটকি।
পুঁটি মাছ দিয়ে বিশেষ গাঁজন পদ্ধতিতে তৈরি চ্যাপা কিশোরগঞ্জের একটি ঐতিহ্যবাহী খাদ্যোপাদান। হাওর-বিল সমৃদ্ধ কিশোরগঞ্জে আশ্বিন-কার্তিক-অগ্রহায়ন মাসে প্রচুর পরিমাণ পুঁটি মাছ ধরা পাড়ে। এসব পুঁটি মাছের নাড়িভুড়ি বের করে রোদে শুকিয়ে বাজারে তোলা হয়। সেখান থেকে আড়তদার বা চ্যাপা কারিগররা কিনে নিয়ে মাটির মটকায় চেপে চেপে জাগ দিয়ে ভরে কয়েক সপ্তাহ রেখে দেন। এরপরই গাঁজন পদ্ধতিতে তৈরি হয় স্যাঁতস্যতে চ্যাপা।
কিশোরগঞ্জ ছাড়াও বিভিন্ন হাওর অধ্যুষিত জেলা থেকে শত শত মণ বিভিন্ন মাছের শুঁটকি শহরের বড়বাজারের মোকামে আসে। আর স্থানীয় আড়তদাররা সেগুলি কিনে গুমাদজাত করেন। এখান থেকেই প্রকৃয়াজাত করে এসব শুঁটকি এবং চ্যাপা রপ্তানি হয় দেশের বিভিন্ন জেলাসহ বিদেশেও। তবে বিভিন্ন জাতের শুঁটকির মধ্যে চ্যাপার দাম বেশ চড়া। মানভেদে এখন স্থানীয় বাজারে চ্যাপা বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি।
শুকনো পুঁটিগুলো বায়ুরোধক পদ্ধতিতে চেপে চেপে মাটির মটকায় ভরে জাগ দিয়ে তৈরি করা হয় ‘চ্যাপা’। কেবল কিশোরগঞ্জ বড়বাজারেই বছরে কেনাবেচা হয় ১২শ’ মেট্রিকটন বিভিন্ন মাছের শুঁটকি। এর মধ্যে পুঁটি মাছের শুঁটকিই বেশি বিক্রি হয় বলে জানিয়েছেন আড়তদাররা। তবে জেলার বাজিতপুর, কুলিয়ারচর, ভৈরবসহ অন্যান্য বাজারেও প্রচুর পরিমাণ বিভিন্ন জাতের শুঁটকি কেনাবেচা হয়।
বর্ষার পানি নেমে যাবার পর আশ্বি-কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে প্রতিটি জলাশয়েই প্রচুর পরিমাণ মাছ ধরা পড়ে। দৈনন্দিন চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত মাছগুলোর নাড়িভুড়ি ফেলে রোদে শুকিয়ে শুঁটকি বানিয়ে সারা বছর সংরক্ষণ করে রাখা হয়। এসব শুঁটকি বা চ্যাপা মুখরোচক ক্ষুধাবর্ধক খাবার হিসেবে বেশ জনপ্রিয়।
কিশোরগঞ্জের চ্যাপা মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউরোপ-আমেরিকার বাঙ্গালী অধ্যুষিত বিভিন্ন শহরেও রপ্তানি হয়। বাংলাদেশ থেকে কেউ বিদেশে গেলে তাদের মাধ্যমে এদেশের স্বজনরা প্রবাসী স্বজনদের কাছে চ্যাপাসহ নানা রকম শুঁটকি পাঠিয়ে থাকেন। প্রাকৃতিক জলাশয় সমৃদ্ধ মৎস্যভাণ্ডার খ্যাত বিভিন্ন জেলার লোকজন শুঁটকি বা চ্যাপার নাম শুনলেই তাদের জিভে পানি এসে যায়। শুঁটকি বা চ্যাপা এখন বিভিন্ন খাবারের হোটেলেও খাদ্য তালিকায় জনপ্রিয় উপাদান হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। বিশেষ করে এই রমজানে গৃহিনীদের কাছে একটি অন্যতম আকর্ষণীয় উপাদান হচ্ছে চ্যাপার তরকারি এবং চ্যাপা ভর্তা।
সূত্র : কিশোরগঞ্জের মুখরোচক চ্যাপার কদর দেশময় [কিশোরগঞ্জ নিউজ, ২২ জুন ২০১৭]