আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
২০১৮ সালে ২০০ বছর হবে বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম সংবাদপত্রের। কলকাতার প্রেস ক্লাব দিনটি উদযাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। আসছেন স্বয়ং রাষ্ট্রপতি।
তারিখটা ছিল ১৮১৮ সালের ২৩ মে। শ্রীরামপুরে ব্যাপটিস্ট মিশনারিরা প্রকাশ করলেন ‘সমাচার দর্পণ’। সেই প্রথম বাংলা ভাষায় প্রথম খবরের কাগজ। তবে দৈনিক নয়, সাপ্তাহিক। দাম ছিল চার আনা। কাগজের মালিক ও প্রকাশক হিসেবে নাম ছাপা হতো ‘ব্যাপটিস্ট মিশনারি সোসাইটি’-র। সম্পাদক ছিলেন জন ক্লার্ক মার্শম্যান। মুদ্রক শ্রীরামপুরের ব্যাপটিস্ট মিশন প্রেস। ১৮০০ সালে যে ছাপাখানার পত্তন করেছিলেন উইলিয়াম কেরি। পঞ্চানন কর্মকার নামে এক বাঙালি ঢালাই হরফের কারিগরের তৈরি বাংলা হরফ দিয়ে এখানেই ছাপানো হয়েছিল বাংলা বাইবেল, সংস্কৃত ব্যাকরণের বই।
সমাচার দর্পণের আগে বাংলায় মাসিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছে। নাম ‘দিগদর্শন’। সেটাও প্রকাশ করতেন এই ব্যাপটিস্ট মিশনারিরাই। সেই পত্রিকার পাঠকপ্রিয়তায় উৎসাহিত হয়েই বাংলায় খবরের কাগজ প্রকাশের উদ্যোগ নেন তাঁরা। সেই কাগজের ২০০ বছর হচ্ছে ২০১৮ সালে। একই সাথে ২০০ বছরে পড়ছে ঐতিহাসিক শ্রীরামপুর কলেজ, যেখানে এখনও সযত্নে রাখা আছে দিগদর্শন এবং সমাচার দর্পণের কিছু সংখ্যা, সংরক্ষিত আছে মুদ্রণযন্ত্রটি, যাতে ওই দুটি কাগজ ছাপা হতো। জানালেন বিশিষ্ট কবি ও সাংবাদিক এবং শ্রীরামপুরের বাসিন্দা মৃদুল দাশগুপ্ত।
সমাচার দর্পণের ২০০ বছর পূর্তিকে স্মরণীয় করে রাখতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে কলকাতা প্রেস ক্লাব। ৩০ জুন কলকাতার রবীন্দ্র সদনে এই উপলক্ষ্যে একটি অনুষ্ঠান হবে, যাতে প্রধান অতিথি হবেন ভারতের বিদায়ী রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি। তবে শুধু রাষ্ট্রপতি হওয়ার সুবাদেই নয়, নিজে একজন নিবিষ্ট পাঠক এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সোচ্চার সমর্থক প্রণব মুখার্জিই এই উদযাপনে যোগ্যতম অতিথি, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। সম্প্রতি এক বাংলা দৈনিকের ৬৪ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, গণতন্ত্রের যে স্তম্ভটি সব থেকে সুদৃঢ় থাকা উচিত, সেটি সংবাদমাধ্যম। যে পেশার মানুষদের সৈনিকের মতোই সজাগ, সতর্ক, সচেতন থাকা উচিত, সেটি সাংবাদিকতা।
কলকাতা প্রেস ক্লাব এই উপলক্ষ্যে বাংলা সংবাদপত্র প্রকাশনার গত ২০০ বছরের বিকাশ ও বিবর্তন বিষয়ক লেখার একটি সংকলন প্রকাশ করবে, যে বইটিরও আনুষ্ঠানিক মোড়ক উন্মোচন করবেন রাষ্ট্রপতি। একালের বিশিষ্ট বাঙালি সাংবাদিকেরা লিখবেন সেকালের সাংবাদিকতা নিয়ে, জানিয়েছেন কলকাতা প্রেস ক্লাবের বর্তমান সভাপতি, বলিষ্ঠ সাংবাদিক স্নেহাশিস শূর। কলকাতা, তথা বাংলার সাংবাদিকরা খুবই উৎসাহিত এবং উত্তেজিত, বাংলা সংবাদপত্রের দ্বিশতবর্ষপূর্তির এই ঐতিহাসিক ক্ষণের শরিক থাকতে পারবেন ভেবে।
সূত্র : বাংলা সংবাদপত্রের ২০০ বছর [ডয়চে ভেলে, ২২ জুন ২০১৭]
