শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলা : বছর ঘুরলেও শেষ হয়নি মামলার তদন্ত

আহমাদ আমিন, বিশেষ প্রতিনিধি (কিশোরগঞ্জ) ।।

৭ জুলাই বৃহস্পতিবার শোলাকিয়া হামলার এক বছর পূর্ণ হলো। বছর ঘুরলেও শোলাকিয়া হামলার তদন্ত শেষ করতে পারেনি পুলিশ। উগ্রবাদী হামলায় সরাসরি জড়িত সবাই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে মারা গেলেও পুলিশ এখন ছুটছে অস্ত্রদাতা, অর্থদাতা ও মদদদাতাদের সন্ধানে। শোলাকিয়ায় উগ্রবাদী হামলার ঘটনায় যে মামলা হয়েছে, এর তদন্ত কর্মকর্তা কিশোরগঞ্জ মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোর্শেদ জামান বলেছেন, এখনও এ মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। তাই মামলার অভিযোগপত্র দিতে আরো সময় লাগবে। তবে এ মামলার তদন্তে অনেক অগ্রগতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন মোর্শেদ জামান। তার দাবি, শোলাকিয়া হামলার পর দেশে যে উগ্রবাদ বিরোধী সফল অভিযান হয়েছে, ওইসব অভিযানে এ মামলার তদন্ত থেকে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, তা কাজে লেগেছে।

তিনি জানান, গত ঈদুল ফিতরের দিন শোলাকিয়ায় উগ্রবাদী হামলার অন্যতম হোতা ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজিব গান্ধী (৩২)। গত ২৯ মে তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নেয় কিশোরগঞ্জ পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে সে। পুলিশের কাছে অস্ত্রদাতা, অর্থদাতা এবং হামলার নেপথ্যে আরো কারা ছিল তাদের নাম প্রকাশ করেছে রাজিব গান্ধী। জিজ্ঞাসাবাদে গুলশানের হলি আর্টিজান হোটেল ও শোলাকিয়া হামলায় রাজিব গান্ধী নিজের জড়িত থাকাসহ আরো অনেকের নাম বলেছে। রিমান্ড শেষে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে সে। তবে জিজ্ঞাসাবাদে কাদের নাম বা কত জনের নাম এসেছে তা জানাননি তদন্ত কর্মকর্তা।

সূত্র জানায়, রংপুরে জাপানি নাগরিক হোসিওকুনিও ও ধর্মান্তরিত রহমত আলী, পঞ্চগড়ের যজ্ঞেশ্বর পুরোহিত, কুড়িগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলী, গাইবান্ধার তরুন দত্ত, দেবেশ ও ফজলে রাব্বী, টাঙ্গাইলের দর্জি নিখিল, পাবনার নিত্যানন্দ পাণ্ডব, নাটোরের সুনীল গোমেজ, কুষ্টিয়ার ডা. সানাউল, রাজশাহীর প্রফেসর রেজাউল ও ঢাকার সিজার তাবেলা হত্যাকাণ্ডসহ নব্য জেএমবির সদস্যরা সারা দেশে আরো ২৪টি হত্যাকাণ্ড ঘটায়। ওইসব হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত ছিল, তাদের মধ্যে থেকে সাহসী ও হিংস্রদের হলি আর্টিজান এবং শোলাকিয়ায় হামলার দায়িত্ব দেয়া হয়।

শোলাকিয়া হামলা সম্পর্কে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জানান, শোলাকিয়ায় পুলিশের ওপর সরাসরি হামলা চালায় দু’জন। কিন্তু পরিকল্পনায় ছিল পাঁচজন। শোলাকিয়া হামলার মূল পরিকল্পনাকারী রাজীব গান্ধী। তার সাথে তামিম চৌধুরী, মারজান, সারোয়ান জাহান মানিক ও মেজর জাহিদ মিলে হামলার ছক তৈরি করে। এরা সবাই নব্য জেএমবির সদস্য। তদন্ত কর্মকর্তার দাবি, হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল, বিপুলসংখ্যক মানুষের হতাহতের ঘটনা ঘটিয়ে সরকারের পতন ঘটানো।

পুলিশ জানায়, হলি আর্টিজান ও শোলাকিয়ার পরিকল্পনা এক সাথেই করা হয়। এ নিয়ে জঙ্গিরা ঢাকায় দু’দফা বৈঠক করে। রাজীব গান্ধী হামলাকারীদের মধ্যে খায়রুল ইসলাম পায়েল বাধন, শরিফুল ইসলাম ডন, রোহান ইমতিয়াজ স্বপন ও শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বলকে দুটি হামলার দায়িত্ব দেয়।

পরবর্তী সময়ে শোলাকিয়া হামলায় অংশ নেয়া তামিম চৌধুরী নারায়ণগঞ্জে, মেজর জাহিদ ঢাকার রূপগঞ্জে, আকাশ গাজীপুরের পাতারটেকে, শরিফুল ইসলাম ডন পুলিশের জঙ্গিবিরোধী অভিযানে মারা যায়। এছাড়া আবির রহমান শোলাকিয়ায় পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। সে কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার ত্রিবিদ্যা গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে। আবির ঢাকায় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বিবিএ’র ছাত্র ছিল। এদিন পুলিশের গুলিতে আহত হয় আরেক জঙ্গি শফিউল ইসলাম। তাকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে গত ৪ আগস্ট র‌্যাবের একটি দল ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ নিয়ে আসার পথে নান্দাইলে সন্ত্রাসীদের সাথে র‌্যাবের বন্দুকযুদ্ধের সময় শফিউল ‘এনকাউন্টারে’ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। সে দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট এলাকার আব্দুল হাইয়ের ছেলে। তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করতে র‌্যাবের দলটি কিশোরগঞ্জে নিয়ে আসছিল।

শোলাকিয়া হামলার ঘটনায় শফিউল ইসলাম, জাহিদুল হক তানিম এবং অজ্ঞাতনামা আরো কিছু আসামিদের বিরুদ্ধে গত বছরের ১০ জুলাই হামলার স্থানে চেকপোস্টের দায়িত্বে থাকা পাকুন্দিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শামসুদ্দিন বাদী হয়ে একটি মামলা করেন।

গত বছর শোলাকিয়ায় উগ্রবাদীদের হামলায় পুলিশ সদস্য আনসারুল হক, জহিরুল ইসলাম নিহত হন। দু’পক্ষের গোলাগুলির সময় নিহত হন শোলাকিয়া এলাকার ঝর্ণা রানী ভৌমিক নামে এক নারী।

পুলিশ জানিয়েছে, এ মামলায় এখন রাজিব গান্ধী ছাড়াও গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের আনোয়ার হোসেন (৪৬) এবং কিশোরগঞ্জ শহরের জাহিদুল হক তানিম (২৫) কারাগারে রয়েছে।

Similar Posts

error: Content is protected !!